স্পোর্টস ডেস্ক :
ম্যাচ শুরু হওয়া মাত্রই প্রতিপক্ষের এগিয়ে থাকার স্বস্তি কেড়ে নিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। ঘুচিয়ে দিল এক গোলের ব্যবধান। ওভাবে গোল হজম করে তেতে উঠবে কী, উল্টো রদ্রিগো-এমবাপেদের পায়ে যেন ভর করল রাজ্যের ক্লান্তি। আর পেনাল্টি পেয়ে হতাশায় ডোবালেন ভিনিসিউস জুনিয়র। তবে, উত্তেজনা আর নাটকীয়তার সবটুকু যেন জমা রইল টাইব্রেকারের জন্য। যেখানে বড় ভূমিকা রাখল ভিএআরের একটি সিদ্ধান্ত, যা পক্ষে গেল রিয়াল মাদ্রিদের। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে জায়গা করে নিল রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।
ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় বুধবার (১২ মার্চ) রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে ১-০ গোলে জিতে ম্যাচ টাইব্রেকারে টেনে নেয় আতলেতিকো, কারণ প্রথম লেগে রেয়াল ২-১ ব্যবধানে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-২। পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে জিতে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে এগিয়ে যায় রেকর্ড ১৫ বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা।
গতিময় ফুটবলে চোখের পলকে যারা প্রতিপক্ষের রক্ষণ গুঁড়িয়ে দিতে পারদর্শী, ভোগান্তির মাঝেই যারা লিখতে পারে প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য সব গল্প, সেই রিয়ালের মাঝে ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে আজ এসব গুণাবলীর কোনো কিছুই দেখা যায়নি। আক্রমণে গিয়ে তাদের খেই হারানো, ভুল পাসে প্রতিপক্ষের পায়ে বল তুলে দেওয়া ছিল আরও দৃষ্টিকুট।
কিন্তু, দিনশেষে স্নায়ুচাপের টাইব্রেকারে জেগে উঠল তারা। ভাগ্যও তাদের সহায় হলো।
দুই দলেরই প্রথম দুটি শট জালে জড়ায়; তবে আতলেতিকোর হুলিয়ান আলভারেসের শটের পর হঠাৎ বিরতি, খানিক বাদে ভিএআরের সাহায্যে তার গোলটি বাতিল করে দিলেন রেফারি। কারণ, স্লিপ করে পড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে শট ঠিকই নিতে পারেন তিনি, কিন্তু বলে স্পর্শ লেগে যায় তার দুই পা! তাতেই বিপত্তি এবং গোল বাতিল।
পরে লুকাস ভাসকেসের দুর্বল শট ঠেকিয়ে আতলেতিকোর আশা জাগান ইয়ান ওবলাক, কিন্তু মার্কোস ইয়োরেন্তে ক্রসবারে মেরে বসেন। এরপর রেয়ালের শেষ শট নিতে আসেন আন্টোনিও রুডিগার, বল প্রায় ঠেকিয়েই দিয়েছিলেন ওবলাক, কিন্তু তার হাতে লেগেও বল চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে।
মেত্রোপলিতানোয় আতলেতিকোর কোচ-খেলোয়াড়-সমর্থকদের চোখেমুখে তখন রাজ্যের অন্ধকার। তার পাশেই চলতে থাকে রেয়ালের উৎসব। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে ষষ্ঠবার টাইব্রেকারে গড়াল মাদ্রিদ ডার্বি, এবং প্রতিবারই বিজয়ী দলের নাম রিয়াল মাদ্রিদ।
দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে মাঠে বল গড়ানোর আগেই গ্যালারি থেকে ভাসে আসছিল গর্জন, ম্যাচ শুরু হতেই তা বেড়ে গেল বহুগুণে। ২৮ সেকেন্ডই যে রিয়াল মাদ্রিদের জালে বল পাঠিয়ে দিল স্বাগতিকরা।
প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের সামনে থেকে উড়ে আসা বল নিজেদের সীমানায় ক্লিয়ার করার সুযোগ পেয়ে পারেননি রাউল আসেন্সিও। এরপর কয়েকজন সতীর্থের পা ঘুরে বল পেয়ে, ডি-বক্সের ডান দিক থেকে গোলমুখে পাস দেন রদ্রিগো দে পল। সেখানেও দলকে বিপদমুক্ত করার সুযোগ নষ্ট করেন ডিফেন্ডার আসেন্সিও, এরপর খুব কাছ থেকে স্লাইড শটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান কনর গ্যালাঘার।
শুরুতেই এতবড় ধাক্কায় রিয়াল মাদ্রিদের আত্মবিশ্বাসে যেন চোট লাগে। ধীর গতির ফুটবলে প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভাঙতেই পারছিল না তারা।
এর মাঝেই ২৫তম মিনিটে আবার তাদের ডি-বক্সে ভীতি ছড়ায় আতলেতিকো। এবার অবশ্য আলভারেসের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন থিবো কোর্তোয়া। পরের ১৫ মিনিটে এই বেলজিয়ান গোলরক্ষক প্রতিপক্ষের আরও দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন।
প্রথমার্ধে গোলে মাত্র তিনটি শট নিতে পারা রেয়াল বিরতির পরও নিজেদের খুঁজে ফেরে।
চোট শঙ্কা কাটিয়ে শুরুর একাদশে নামা এমবাপে ৬৮তম মিনিটে ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় রেয়াল। কিন্তু স্পট কিকে যেভাবে মিস করলেন ভিনিসিউস, তা ছিল অবিশ্বাস্য; বল উড়ে গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে।
রিয়ালের জার্সিতে এই প্রথম স্পট কিকে গোল করতে ব্যর্থ হলেন ভিনিসিউস। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আগের সাতবারই সফল হয়েছিলেন তিনি। এই অর্ধে আতলেতিকোর খেলায়ও তেমন ধার ছিল না। তারপরও কয়েকটি সুযোগ অবশ্য তৈরি করেছিল তারা; কিন্তু সাফল্য না মেলায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়।
অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের শেষ ভাগে রিয়ালের মাঝে মরিয়া ভাব ফুটে ওঠে। বেশিরভাগ সময় আতলেতিকোর বক্সের আশেপাশেই বল ছিল, পরপর কয়েকটি কর্নারও আদায় করে নেয় সফরকারীরা। কিন্তু রক্ষণে মজবুত সিমেওনের দল ঘর সামলে রেখে ম্যাচ টেনে নেয় টাইব্রেকারে।
চরম নাটকীয়তায় ভরা সেই পর্বে কত কিছুই না হলো! সবশেষে, একদিকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ছবি, অন্যদিকে হতাশায় ভরা হাজার হাজার মুখ। সেখানে ক্ষুব্ধ দিয়েগো সিমেওনের ছোটাছুটি আলাদা করে নজর কাড়ল। ক্ষোভে ফেটে পড়ার মাঝে দলের সবাইকে সান্ত্বনা দিতেও দেখা গেল তাকে।