নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদ্মার বুকে রেল লাইন স্থাপানের কাজ প্রায় শেষের দিকে। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী জুলাইয়ে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তার আগে পরীক্ষামূলকভাবে সেতু দিয়ে প্রথম ট্রেন (ট্রাককার) চালানো হবে ৩০ মার্চ। ওই দিন মাওয়া রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে পদ্মা সেতুর উপর ট্রাককারটি ভাঙ্গা প্রান্তের ১০-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যাবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন।
একইসঙ্গে এগিয়ে চলছে অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নও। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের জুনেই পদ্মার বুকে ট্রেন পারাপারের স্বপ্ন সত্যি করার লক্ষ্যে দিনরাত চলছে কাজ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখন অপেক্ষা ট্রেন চলার। সেই কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। গেল আগস্ট মাসে অনুমতি পাবার পরও কারিগরি জটিলতায় মূল সেতুর ওপর নির্ধারিত সময়ে রেললাইন বসানো হয়নি। তবে জটিলতা নিরসনের পর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে রেললাইন বসানো।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। তবে মাওয়া থেকে ভাঙা অংশের কাজ এগিয়েছে বেশি। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙা পর্যন্ত ট্রেন চালাতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই অংশের কাজ এগিয়েছে ৮২ শতাংশ।
পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, এদিন ট্রাককারের ইঞ্জিন ও মালবাহী বগি দিয়ে আমরা ট্রায়াল রান করাব। কেননা রেলের ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী বগি আমাদের এখানে নেই।
আফজাল হোসেন জানান, পদ্মা সেতুর ৪২ কিলোমিটার রেলপথের অগ্রগতি এখন ৯২ শতাংশের বেশি। আর পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেলপথ বসবে ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। এরই মধ্যে ৬ কিলোমিটারের বেশি রেলপথ বসে গেছে। বাকি মাত্র ৩০০ মিটার। পাথরবিহীন রেললাইন বসানো হচ্ছে মাওয়া প্রান্ত থেকে। জাজিরা প্রান্তের কাজ শেষ। আর মাওয়া প্রান্ত থেকে ট্র্যাককারে করেই স্লিপারসহ অন্যান্য মালামাল সেতুতে সহজে ঢুকতে পারছে। তাই দ্রুত রেললাইন বসানো সম্ভব হচ্ছে। সেতুর উপর তলায় সড়কপথের যানবাহন সচল রেখেই দেশের প্রথম পাথরবিহীন ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। কিউরিংয়ের পর তা রেল চলাচলের উপযোগী হবে। তাই আপাতত সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রাককার দিয়ে রেল চালানোর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ মার্চ। তবে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করবেন রেলমন্ত্রী। কেননা তিনি ওইদিন পদ্মা সেতুর ওপর ট্রাককারে অবস্থান করে মাওয়া প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা প্রান্তে যাবেন। তিনি যদি সময় দেন তবে ৩০ মার্চই আমরা ট্রাককার দিয়ে ট্রেন চালাব।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, ট্রাক বসানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে হলেও আমাদের স্টেশনগুলো এখনো নির্মিত হয়নি। এছাড়া সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ টুকিটাকি কাজ করতে সময় লাগবে। তাই আগামী জুলাই মাসে আমরা পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ঢাকা-মাওয়া অংশে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর ওপর বড় রেলসেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। কমলাপুর থেকে ভাঙা পর্যন্ত ১০টি রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ কাজের জন্য চৌঠা ডিসেম্বর থেকে বন্ধ থাকা কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ লাইনে চলতি মাসেই ট্রেন চলবে বলে জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।