নিজস্ব প্রতিবেদক :
জুনে ৪৭৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৩ জন নিহত, ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৩৩টি দুর্ঘটনায় ৫৬৮ জন নিহত এবং ৮৬৭ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে ১৬০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত, ১১৭ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (১৭ জুলাই) সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন মাসে ৪৭৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫১৩ জন নিহত এবং ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ জন। অন্যদিকে, নৌ-পথে এ সময়ে ১৭টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৩৫ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
জুনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২৭ জন নিহত এবং ২৬৩ জন আহত হয়েছেন। পক্ষান্তরে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এ বিভাগে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৫৮ জন আহত হয়েছেন।
বরাবরের মতো সড়ক দুর্ঘটনায় এগিয়ে আছে মোটরসাইকেল। জুন মাসে ১৬০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩.৬৮%। মোটসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত এবং ১১৭ জন আহত হয়েছেন; যা মোট নিহতের ৩৭.০৫% এবং আহতের ২৪.৬৩%।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ২০৩ জন চালক, ১০৫ জন পথচারী, ৮৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫২ জন শিক্ষার্থী, ১০ জন শিক্ষক, ৯৮ জন নারী, ৪৭ জন শিশু, ২ জন সাংবাদিক, একজন চিকিৎসক, এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২ পুলিশ সদস্য, ১৬১ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৮৭ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ৪৫ জন শিক্ষার্থী, ৪৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯ জন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক ও ৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭০০টি। এর মধ্যে ২৪% মোটরসাইকেল, ২৮.৭১% ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২.৪২% বাস, ১৫.৫৭% ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪.৮৫% সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.৭১% নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬.৭১% কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুন মাসে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩.২৬% জাতীয় মহাসড়কে, ৩২% আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯.৪৭% ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৫৭% ঢাকা মহানগরীতে, ০.৬৩% চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং ১.৫% রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রকৃতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুন মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫৫.৭৮% গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০.৬৩% মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪.৫২% নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৭.১৫% বিবিধ কারণে, ০.৮৪% গাড়ির চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১.৫% ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে-
জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা; দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক অবাধ চলাচল করা; মোটরসাইকেল; ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়া; সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং; সড়কে বাতি না থাকা; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি; যানবাহনের ত্রুটি; ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো; সড়কে চাঁদাবাজি; পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক; ফিটনেসবিহীন যানবাহন; বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো এবং রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত ব্যক্তির অবহেলা, ফিডার রোড এবং আঞ্চলিক রোড থেকে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশগুলো হচ্ছে-
মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ; ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস দেওয়া; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা; চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং অঙ্কন ও স্থাপন করা; সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা; ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা; ঈদের আগে ৩ দিন আগে থেকে জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা; গণপরিবহন বিকশিত করা; নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা এবং নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা।