Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবন হাতে জীবিকার পথে লাখো মানুষ

মাওয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকার পথে মানুষ

কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীদের অনুরোধে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকায় গণপরিবহনও বন্ধ। এমতবস্থায় জীবিকার জন্য চাকরি বাঁচাতে যে কোনো উপায়েই হোক ফিরতে হবে কর্মস্থলে। সেই তাগিদ থেকে হাজার হাজার মানুষ এখন ঢাকামুখি।

রাজধানীর গাবতলী ব্রিজের দুই লেনেই গিজগিজ করছে মানুষ। ঊর্ধ্বশ্বাসে রাজধানী শহর ঢাকার দিকে ছুটে চলা এসব মানুষের মাথায়, ঘাড়ে ও হাতে নিজেদের ওজনের চেয়েও বড় বড় ব্যাগ আর চোখে-মুখে অবর্ণনীয় ভোগান্তির ছাপ। আছে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ও। ঢাকায় ঢোকার জন্য এই মানুষগুলো কমপক্ষে তিনটি যানবাহন বদলেছে। ক্ষেত্র বিশেষে এই সংখ্যাটা দশের অধিকও।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকায় ঢুকতে চাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের এমন ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায়। হুট করে ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢোকা মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের পক্ষ থেকে।

মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে পাবনা থেকে ঢাকায় ঢুকছেন জায়েদা বেগম। পেশায় গৃহকর্মী এই নারীর স্বামী গুজা রোগে আক্রান্ত থাকায় যাত্রা পথে অবর্ণনীয় কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার স্বামীর পিঠে সমস্যা, তাই সোজা হয়ে হাটা চলা করতে পারে না। কোথাও সোজা হয়ে বসতেও পারে না। এই মানুষটাকে নিয়ে পাঁচটা গাড়ি বদলিয়ে, পায়ে হেঁটে গাবতলী পর্যন্ত আসছি, যাবো যাত্রাবাড়ী। এই মানুষটাকে টানতে টানতে আমিই না জানি কখন জ্ঞান হারায়া রাস্তায় পইড়া যাই! একবার মনে হইছে অর্ধেক রাস্তা থাইকা ঘুইরা যাই।

সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোড় এলাকা থেকে সপরিবারে পিকআপে করে বাইপাইল পর্যন্ত এসেছেন আবুল হোসেন। একশত টাকার ভাড়া পাঁচশত টাকা করে দিয়েও ঢাকা এসে পৌঁছাতে না পারার আক্ষেপ এবং ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে এই ব্যক্তি বলেন, ছোট বাচ্চা আর অসুস্থ বউ নিয়ে ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা করে দিয়ে বাইপাইল পর্যন্ত এসেছি সিরাজগঞ্জ থেকে। বাইপাইল থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত আসতে পরিবহন বদলেছি আরও তিনটি। এরপরে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতেও হয়েছে তবুও এখন পর্যন্ত ঢাকায় পৌঁঁছতে পারিনি। যাব নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। এতো কিছু করে ঢাকায় পৌঁছাতে পারলেও নারায়ণগঞ্জ কিভাবে যাব সেটা নিয়ে আছি মহা চিন্তায়। ছোট বাচ্চাটা একটু পরে পরে রাস্তায় বসে পড়েছে ক্লান্তির কারণে। বউও আর কুলাতে পারছে না।

মিরপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন নার্গিস আক্তার। গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে খবর পাওয়ার পরেই গতকাল রাত দশটায় নওগাঁ থেকে একই এলাকার আরও তিন-চারজন সহকর্মীসহ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। রাস্তায় ৬ থেকে ৭টি পরিবহন ভেঙে, পায়ে হেঁটে আবার কখনো অটোরিকশায় চেপে আমিনবাজার এসে পৌঁছেছেন দুপুর ২টায় ।

পথে ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে এই পোশাকশ্রমিক বলেন, মালিকেরা আমাগো নিয়া এমন জীবন মরণ খেলা না খেললেও পারে। কারখানা বন্ধ ঘোষণা না করলেই সব থাইকা বেশি ভালো হইতো। আমরাতো অসহায় গরিব মানুষ। খাওয়া পরার জন্য জীবন হাতে লইয়া জীবিকার সন্ধানে আইছি। রাস্তার ভোগান্তির কথা নয় বাদই দিলাম, সামনে গেলে এখন পুলিশ ধরবো নানান কথা জিগাইবো। এতো প্রশ্নের উত্তর কই থেকা দিমু? আমরাতো পেটের দায়ে কোন কিছু না চিন্তা কইরাই রাস্তায় নাইমা আইছি।

পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢোকা মানুষদের বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সালাম জোনের গাবতলী চেকপোস্টের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসুদ রানা বলেন, আজ অন্যান্য দিনের থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢোকা মানুষের চাপ বেশি। গার্মেন্টস কারখান খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই এই চাপ বাড়ছে। আমরা পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করলেও মানবিক কারণে এসব শ্রমজীবী মানুষদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি আগের মতোই।

Tag :
জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

জীবন হাতে জীবিকার পথে লাখো মানুষ

প্রকাশের সময় : ১১:০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীদের অনুরোধে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকায় গণপরিবহনও বন্ধ। এমতবস্থায় জীবিকার জন্য চাকরি বাঁচাতে যে কোনো উপায়েই হোক ফিরতে হবে কর্মস্থলে। সেই তাগিদ থেকে হাজার হাজার মানুষ এখন ঢাকামুখি।

রাজধানীর গাবতলী ব্রিজের দুই লেনেই গিজগিজ করছে মানুষ। ঊর্ধ্বশ্বাসে রাজধানী শহর ঢাকার দিকে ছুটে চলা এসব মানুষের মাথায়, ঘাড়ে ও হাতে নিজেদের ওজনের চেয়েও বড় বড় ব্যাগ আর চোখে-মুখে অবর্ণনীয় ভোগান্তির ছাপ। আছে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ও। ঢাকায় ঢোকার জন্য এই মানুষগুলো কমপক্ষে তিনটি যানবাহন বদলেছে। ক্ষেত্র বিশেষে এই সংখ্যাটা দশের অধিকও।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকায় ঢুকতে চাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের এমন ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায়। হুট করে ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢোকা মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের পক্ষ থেকে।

মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে পাবনা থেকে ঢাকায় ঢুকছেন জায়েদা বেগম। পেশায় গৃহকর্মী এই নারীর স্বামী গুজা রোগে আক্রান্ত থাকায় যাত্রা পথে অবর্ণনীয় কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার স্বামীর পিঠে সমস্যা, তাই সোজা হয়ে হাটা চলা করতে পারে না। কোথাও সোজা হয়ে বসতেও পারে না। এই মানুষটাকে নিয়ে পাঁচটা গাড়ি বদলিয়ে, পায়ে হেঁটে গাবতলী পর্যন্ত আসছি, যাবো যাত্রাবাড়ী। এই মানুষটাকে টানতে টানতে আমিই না জানি কখন জ্ঞান হারায়া রাস্তায় পইড়া যাই! একবার মনে হইছে অর্ধেক রাস্তা থাইকা ঘুইরা যাই।

সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোড় এলাকা থেকে সপরিবারে পিকআপে করে বাইপাইল পর্যন্ত এসেছেন আবুল হোসেন। একশত টাকার ভাড়া পাঁচশত টাকা করে দিয়েও ঢাকা এসে পৌঁছাতে না পারার আক্ষেপ এবং ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে এই ব্যক্তি বলেন, ছোট বাচ্চা আর অসুস্থ বউ নিয়ে ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা করে দিয়ে বাইপাইল পর্যন্ত এসেছি সিরাজগঞ্জ থেকে। বাইপাইল থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত আসতে পরিবহন বদলেছি আরও তিনটি। এরপরে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতেও হয়েছে তবুও এখন পর্যন্ত ঢাকায় পৌঁঁছতে পারিনি। যাব নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। এতো কিছু করে ঢাকায় পৌঁছাতে পারলেও নারায়ণগঞ্জ কিভাবে যাব সেটা নিয়ে আছি মহা চিন্তায়। ছোট বাচ্চাটা একটু পরে পরে রাস্তায় বসে পড়েছে ক্লান্তির কারণে। বউও আর কুলাতে পারছে না।

মিরপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন নার্গিস আক্তার। গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে খবর পাওয়ার পরেই গতকাল রাত দশটায় নওগাঁ থেকে একই এলাকার আরও তিন-চারজন সহকর্মীসহ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। রাস্তায় ৬ থেকে ৭টি পরিবহন ভেঙে, পায়ে হেঁটে আবার কখনো অটোরিকশায় চেপে আমিনবাজার এসে পৌঁছেছেন দুপুর ২টায় ।

পথে ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে এই পোশাকশ্রমিক বলেন, মালিকেরা আমাগো নিয়া এমন জীবন মরণ খেলা না খেললেও পারে। কারখানা বন্ধ ঘোষণা না করলেই সব থাইকা বেশি ভালো হইতো। আমরাতো অসহায় গরিব মানুষ। খাওয়া পরার জন্য জীবন হাতে লইয়া জীবিকার সন্ধানে আইছি। রাস্তার ভোগান্তির কথা নয় বাদই দিলাম, সামনে গেলে এখন পুলিশ ধরবো নানান কথা জিগাইবো। এতো প্রশ্নের উত্তর কই থেকা দিমু? আমরাতো পেটের দায়ে কোন কিছু না চিন্তা কইরাই রাস্তায় নাইমা আইছি।

পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢোকা মানুষদের বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সালাম জোনের গাবতলী চেকপোস্টের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসুদ রানা বলেন, আজ অন্যান্য দিনের থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢোকা মানুষের চাপ বেশি। গার্মেন্টস কারখান খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই এই চাপ বাড়ছে। আমরা পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করলেও মানবিক কারণে এসব শ্রমজীবী মানুষদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি আগের মতোই।