শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:২৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

জানুয়ারিতে ৬২১ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
জানুয়ারিতে ৬২১ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জানুয়ারি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০৮জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১১০০জন। নিহতদের মধ্যে ৭২ নারী এবং ৮৪ শিশু রয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। জানুয়ারিতে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২১টি; এর মধ্যে নিহত ৬০৮ জন এবং আহত কমপক্ষে ১১০০ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭২ জন ও শিশু ৮৪টি। ২৭১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৬৪ জন, যা মোট নিহতের ৪৩.৪২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩.৬৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩.৫১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৩ জন, অর্থাৎ ১২ শতাংশ। এই সময়ে ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, ২ জন আহত হয়েছেন। ২২টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হয়েছেন।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২৬৪ জন (৪৩.৪২ শতাংশ), বাসের যাত্রী ২৮ জন (৪.৬০ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৩৪ জন (৫.৫৯ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৯ জন (৩.১২ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯০ জন (১৪.৮০ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম) ১৮ জন (২.৯৬ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১২ জন (১.৯৭ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৪টি (৩৪.৪৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৫টি (৪২.৬৭ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৬টি (১৫.৪৫ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৪২টি (৬.৭৬ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৪টি (০.৬৪ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন

দুর্ঘটনাগুলোর ১৩৩টি (২১.৪১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৫৮টি (৪১.৫৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪১টি (২২.৭০ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৭৫টি (১২.০৭ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি (২.২৫ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৭.০৮ শতাংশ, সকালে ৩১.০৭ শতাংশ, দুপুরে ১৭.২৩ শতাংশ, বিকালে ১৫.৪৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯.৯৮ শতাংশ এবং রাতে ১৯.১৬ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭.৬৯ শতাংশ; প্রাণহানি ২৬.৪৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৮১ শতাংশ; প্রাণহানি ১৭.৪৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৬১ শতাংশ; প্রাণহানি ১৫.৭৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৫৬ শতাংশ; প্রাণহানি ১২.১৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ শতাংশ; প্রাণহানি ৪.৯৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৭৯ শতাংশ; প্রাণহানি ৬.২৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৩৬ শতাংশ; প্রাণহানি ১১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.১৫ শতাংশ; প্রাণহানি ৫.৯২ শতাংশ ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৬১ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৪২টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম পঞ্চগড় জেলায়। এই জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। আর রাজধানী ঢাকায় ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল ও তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোয় ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। এছাড়া, দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণেও।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১০ দফা সুপারিশও করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলো হলো- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনা ও মন্তব্য

গত জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ১৯.৬১জন। দেশব্যাপী ঘন কুয়াকার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি ও চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। বেপরোয়া যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।

পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে, নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার কারণে বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে পরিবহন শ্রমিকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা এবং সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া