নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ছয় সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবিত সুপারিশ থেকে প্রয়োজনীয় সংস্কার চূড়ান্ত হবে। সংস্কার চূড়ান্ত করার পর সবাই জুলাই চার্টার (সনদ) স্বাক্ষর করবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন প্রধানকে নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছেন। এ কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ। অন্যান্য পাঁচ কমিশন প্রধানরা এর সদস্য।
তিনি বলেন, আগের সরকারগুলো বারবার বলেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কার্যত বিচার বিভাগ কখনোই স্বাধীন ছিল না। এজন্য কমিশন বলেছে, বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন ও কার্যকরভাবে স্বাধীন করতে হবে। এটি ৩৫২ পৃষ্ঠার একটি বড় রিপোর্ট।
এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা ও কথাবার্তা বলবেন। তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে কতটুকু সংস্কার এখনই করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে, এখনই যা করা হবে তা করতে হলে সাংবিধানিক রিফর্ম প্রয়োজন হবে (কিছু কিছু সংস্কার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব হবে) তা ঠিক করা হবে। বিস্তারিত আলোচনার পর অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল নাগরিকদের সবার মতামতের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার নিয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছাবে সেগুলোতে সবাই স্বাক্ষর করবেন। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে যতগুলো সংস্কার চূড়ান্ত হবে তাই হবে জুলাই চার্টার। এই জুলাই চার্টারের কিছু বাস্তবায়ন অন্তর্র্বতী সরকার করবে। কিছু পরবর্তী সরকার এসে করবে। এ বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে হবে নাকি আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, লিগ্যাল সার্ভিসে স্বচ্ছতা আনার জন্য জাজ অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন কিছু রিকমেন্ডেশন দিয়েছেন। তার আলোকে কিন্তু কাজও হয়েছে। জাজ এপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন নীতিমালা নিয়ে আসা হয়েছে। আরেকটা ছিল অ্যাটর্নি সার্ভিস স্থায়ী করার বিষয়। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর অনেক দেশে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আছে। আপনারা জানেন সারা বাংলাদেশের ৪০০০ এর মতো পাবলিক প্রসিকিউটর থাকে। সরকার তাদের নিয়োগ দেয়। দেখা গেছে, সরকারগুলো তাদের কাছাকাছি যারা তাদের মধ্য থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টটা করা হতো। দেখা যেত এই সরকার এলে তার মতো করে প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন, আবার আরেক সরকার তার মতো করে প্রস্তুত নিয়োগ দেন। এই কথাটাকে বাদ দিয়ে একটা স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট হবে, যেভাবে বিসিএসে হয়।
স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার কথা জানিয়েছেন। যেগুলো সাধারণত পুলিশ তদন্ত করে সেগুলো গভর্মেন্ট পলিটিক্যালি ব্যবহার করে। ফলে যে তদন্তগুলো হয় সেগুলো পলিটিক্যাল মাস্টারকে হ্যাপি করার জন্য। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের কেসগুলো কীভাবে কুলসিত হয়েছে পুলিশের তদন্তের কারণে। পুলিশের তদন্তগুলো ফলটি এবং ম্যানুপুলেট করা যায়। এজন্য তারা স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার কথা বলেছেন।
শফিকুল আলম আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চগুলো ডিভিশনে সেটআপ করার জন্য বলেছেন তারা। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের হাই কোর্ট যেখানে ছিল, এখনো সেখানেই আছে। এজন্য হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো বাড়িয়ে ডিভিশনে নেওয়ার কথা বলেছে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো উপজেলা পর্যন্ত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। গরিব মানুষের জন্য যে লিগাল এইড সার্ভিস দেওয়া হয়, সেটি আরও বৃদ্ধি করে গ্রাম পর্যন্ত চলে যায় অবস্থা কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া কোর্টের ভেতর আইনজীবীরা যে পলিটিক্স করেন সে বিষয়ে একটা নীতিমালা দেওয়া হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।