নিজস্ব প্রতিবেদক :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমরা ম্যাচ খেলব শুধুমাত্র ছাত্রলীগের সঙ্গে, যুবলীগের সঙ্গে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
রোববার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর জিরো পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’ থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে উৎখাত করার জন্য সবার মাঠে নামার প্রয়োজন নাই। শুধু ঢাকা কলেজের ছাত্ররাই যথেষ্ট।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যতদিন পর্যন্ত না বিচার নিশ্চিত হয়, ততদিন পর্যন্ত তাদের প্রকাশ্যে আসার কোনো ধরনের অধিকার নেই।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হিন্দুস্থান বসে হুংকার দিবেন আর গুলিস্তানে সংঘর্ষ করবেন। সেই সুযোগ ৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশের ছাত্রজনতা আপনাদের দেবে না। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রাসঙ্গিক কী প্রাসঙ্গিক না সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে ৫ আগস্ট।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর থেকেও বেশি নৃশংস। আওয়ামী লীগের যদি বিচার হতে হয় তাহলে লগি বৈঠা থেকে আওয়ামী লীগের নৃশংসতা আমরা দেখেছি পিলখানা হত্যাকাণ্ডে, শাপলা চত্বরে। আলেম সমাজের ওপর আওয়ামী লীগের নৃশংসতা দেখেছি। বিএনপি, জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ওপর গিত ১৬ বছর গুম, হত্যা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
সারজিস আলম বলেন, এই গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট তো দূরের কথা, এর আশেপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেও ‘গুজব লীগ’ নামতে পারবে না। তাদের মাঠে নামা তো দূরের কথা; বিন্দুমাত্র গুজবের যদি তারা কোনো জায়গায় চেষ্টা করে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করব।
তিনি বলেন, এই ‘গুজব লীগ’ যখন দেখছে রাজপথে কিছু করার সামর্থ নেই। যখন তারা দেখছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিকেক বোধ সম্পন্ন এই ছাত্র-জনতা রাস্তায় আছে, তখন মুখ দেখানোর মতো তাদের মুখ নেই। এই মুখেই বিগত ১৬ বছরে তারা চুনকালি মাখিয়েছে। তাদের জননী নেতাকর্মীদের চুনকালি মাখিয়ে, নিজে মেখে পালিয়েছে। আমার যদি ওইটুকু নৈতিকতা থাকতো, ভালো কাজ করতাম, গার্ড থাকতো, বোল্ডনেস থাকতো- আমি দেশ ছেড়ে পালাতাম না। এই দেশের পুরো ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে নামতো না। সেই জায়গায় তারা তো নিজেরাই চুনকালি মেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সরকার পতনের আন্দোলনে যারা আহত বা নিহত হয়েছে তাদের তথ্য জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪ এ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ক্ষমতা পিপাসুরা আমাদের প্রায় অর্ধ লাখ ভাই বোনদের আহত করেছে। ঐ ২৪ দিনে কীভাবে আপনাদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, তা শুধু মাত্র আপনাদের স্মৃতিতে থাকলে হবে না। আপনাদের স্মৃতিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, আপনারা না পারলে আমাদের কাছে লিখুন, ছবিগুলো পাঠান। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আমরা সব সংগ্রহ করছি। আপনাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ আপমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো লিখুন।
নিহতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ভাই, বোন, সন্তান হারিয়েছেন। আপনারা হারানোর ব্যথা বোঝেন। খুনি হাসিনা কেনো পৃথিবীর কেউ এই ব্যাথা বুঝবে না। কোনো কিছুর বিনিময়ে এই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব না। আপনাদের কাছে অনুরোধ কষ্টগুলো লিখিতভাবে আমাদের কাছে পাঠান। আমরা এগুলো শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো পৃথিবীর কাছে খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকাণ্ড তুলে ধরতে চাই।
মিডিয়ার উদ্দেশ্যে সারজিস বলেন, বিগত ১৬ বছরে আপনাদের প্রকাশ করা উচিত ছিলো, সেটা করতে পারেন নি। আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গত ১৬ বছরে যত অপকর্ম হয়েছে সাহস নিয়ে ভয় না করে আপনারা দেশের সামনে তুলে ধরুন।
মঞ্চে হাসনাত আবদুল্লাহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। এসময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
এছাড়া ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে। এ কাঠামোয় যে ক্ষমতায় যায় সেই হয়ে ওঠে ফ্যাসিস্ট। এ রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন করব।