নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই কর্তৃক আয়োজিত ‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রলীগ অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছিল। শিক্ষাঙ্গন নিরাপদ না হলে পুরো দেশটাই অনিরাপদ হয়ে যাবে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, আর যেন কোথাও ছাত্রলীগ তৈরি হতে না পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সুষ্ঠু একটি দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, ছাত্রলীগের যে কাজকর্ম দেখছেন সেটা দৃশ্যমান কার্যক্রম। তার আগে একটা বিষয় বলতে চাই আমাদের সরকার বা আমরা চাই, প্রত্যেকটা শিক্ষাজ্ঞন নিরাপদ হোক। বাংলাদেশের গ্লোবাল কন্টিশিউনালের জন্য সকল শিক্ষাজ্ঞনকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা সুস্থভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তারা যেন পৃথিবীর যে কোন ছাত্রের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে পারে। এর জন্য একটা সৃজনশীল সিচুয়েশন আমাদের ক্যাম্পাসগুলোতে তৈরি করতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোতে যেন আর কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি না হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, আশা করি সামনে সরকারে যারা আসবে তারাও কাজ করবে। এক মহৎ আন্দোলন ক্যাম্পাস থেকে শুরু হলো। এই রকম আন্দোলন এর আগে তেমন একটা হয়নি। এর যে ব্যাপ্তি তা ধারণার বাইরে। এ আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলো ছাত্রলীগ। তারা ছিল ফ্যাসিবাদের মূল ফুট সোলজার। তারা ফ্যাসিবাদের বয়ান তৈরি করেছে। অনেকে ছাত্রলীগ করতো যে সে একটা চাকরি পাবে। আমার চোখের সামনে গ্রামের যে ছেলেটা ছাত্রলীগ করে তার চাকরি হইছে। কিন্তু যে ছেলেটা পড়ুয়া ও জ্ঞানী তার চাকরি হয়নি। আর ছাত্রলীগের কর্মীদের চাকরি হয়েছে পুলিশে, চাকরি হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে নিরাপদ করতে হলে, শিক্ষাজ্ঞনকে নিরাপদ করতে হবে। এ বিষয় আমাদের সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের কমিশনগুলো হচ্ছে, রিফর্ম কমিশন হচ্ছে। আমরা যে বিতর্কের কথা বলছি সে বিতর্ক শুধু সংবিধান কিংবা পুলিশ কিংবা বিচার ব্যবস্থায় আটকে থাকলে চলবে না। এর বাইরে সামাজিক বিতর্কগুলো হওয়া উচিত যে, শিক্ষাজ্ঞনকে আমরা নিরাপদ কিভাবে করবো, কী করলে আরেকটা ছাত্রলীগ এ দেশে তৈরি হবে না সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। সে জন্য আমাদের বিতর্ক করতে হবে গ্রামেগঞ্জে, প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ বিষয় আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। বলতে হবে না, আমরা এ ধরনের আরেকটা মনস্টার আমাদের সোসাইটিতে চাই না। বাংলাদেশ যেন নিরাপদ হয় এটা চাই।
প্রধান উপদেষ্টার এই প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাজ্ঞনে সন্ত্রাসী পুরোনো তা আমরা অনেকেই জানি। আমরা ইতিহাস যেন না ভুলে যাই, আমরা আমাদের শিক্ষাজ্ঞনকে নিরাপদ রাখতে চাই। যে ছেলেটা দুর্বল সেও যেন শিক্ষাজ্ঞনে নিরাপদ থাকতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেনো সন্ত্রাসমুক্ত থাকে। সে জন্য আমরা চেষ্টা করছি, আপনারাও চেষ্টা করুন। আপনেরা এ ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলেন। প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসে এ বিষয় বিতর্ক হোক। জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে আমাদের ছাত্ররা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে দেখিয়েছে যে, রাষ্ট্র কীভাবে মেরামত করতে হবে। এই রাষ্ট্র মেরামতেরই একটা বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাজ্ঞনের সন্ত্রাসকে আমাদের দূর করতে হবে। রাষ্ট্র মেরামত শুধুমাত্র সংবিধান কিংবা বিচার ব্যবস্থা ঠিক করে হবে না। সমাজে যারা সন্ত্রাস করে তারা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করতে পারে সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।
নিরাপদ বাংলাদেশ চাই এর মুখপাত্র রায়হান উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিউবিটি) সিএসই বিভাগের লেকচারার জহিরুল ইসলাম, একতারা বাংলাদেশের আহ্বায়ক প্লাবন তারিক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, নিউ দিল্লির সাউথ এশিয়ান উইনিভার্সিটির পিএইচডি রিসার্চার শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন।