মানুষে-মানুষে বন্ধুত্ব। তৈরি হয় নানা নজির। জন্ম নেয় আলোচনার। এই বাইরেও ভিন্ন কিছু সম্পর্ক, বন্ধুত্ব সব আলোচনাকে ছাপিয়ে যায় কখনো কখনো। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে মানুষ ও পশুর বন্ধুত্বের এমন একটি ঘটনা। বেশ হৃদয়বিদারক। যা চোখে পানি এনেছে সবার।
ঘটনাটি প্রয়াত মাহুত (হস্তিচালক বা রক্ষক) ও তার হাতিকে নিয়ে। দু’জনের ২৫ বছরের বন্ধুত্বের গভীরতার সাক্ষী হলো নেটদুনিয়া, ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটি দেখে চোখ মুছলেন নেটিজেনরাও কেরলের পালা এলাকার বাসিন্দা দামোদরন নায়ার।
তিনি এলাকায় ওমানাচেত্তন হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে মাহুতের কাজ করেছেন তিনি। এ কাজে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বৃহমাদাতন। প্রিয় হাতির বিশাল দেহে চড়েই পুরো এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন দামোদরন। সারাক্ষণ এ দু’জনকে একসঙ্গেই দেখা যেত। নাওয়া–খাওয়া সব চলতো এক সঙ্গেই। নিজে খাক বা না খাক আগে বৃহমাদাতনের খাওয়ার চিন্তা করতেন দামোদরন।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ২৫ বছরের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বে ছেদ পড়লো ক্যানসারের ছোবলে। শেষ হতে চলল দামোদরণের শরীর। ফল মিললো না কোনো দাওয়ায়। একদিন নিজের বাড়িতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো মাহুত। নিঃসঙ্গ হলো বৃহমাদাতন।
মাহুতের শেষকৃত্যের আগে যেন বৃহমাদাতনকে একবার আনা হয়, এই ইচ্ছে ছিল দামোদরনের। বৃহমাদাতনকে নিয়ে আসে তার বর্তমান মালিক রাজেশ পালাত্তু।
পুরনো বন্ধুর মৃতদেহ দেখে এগিয়ে আসে গজরাজ। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সে তার শুঁড় বাড়িয়ে স্পর্শ করতে চাইছে তার বন্ধুকে। ক্রমাগত শুঁড় উঁচিয়ে ধরছে। যেন ডেকে তুলতে চাইছে বন্ধুকে- বন্ধু ওঠো দ্রুতৃ । কিন্তু তাতো সম্ভব না। তবু শুঁড় নাড়িয়ে তাকে ডাকতে থাকে সে। দামোদরণের পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এসে বৃহমাদাতনের গায়ে হাত বুলিয়ে দেন।
অতঃপর শুঁড় তুলে মাহুত বন্ধুকে প্রণাম করে বৃহমাদাতন। এ সময় তার চোখের কোনে গড়াতে থাকে জল। এরপর বিদায় নেয় সে।
ভারতের সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে জুড়ে দেয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এমন দৃশ্য দেখে আশ-পাশের লোকজন কেঁদে ফেলেন। বন্ধুত্ব যে কতো পবিত্র আর গভীর হতে পারে এ আলোচনা নেটিজেনদের মুখে মুখে।