Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রকল্পজট

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু থেকে শিকলবাহা ওয়াই জংশন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের প্রশস্ততা ১০০ ফুট। আবার কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে ওয়াই জংশন পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কটি ১১৮ ফুট প্রস্থ। আর এ দুই সড়কের সংযোগস্থলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১৮ ফুট। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে দোহাজারী শঙ্খ সেতু পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশকে ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে ২০১৬ সালে পাঠানো হয়।

মন্ত্রণালয় ৩০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে সায় দেয়নি। এর বাইরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাঁচটি বড় স্টেশন ও বাজারের ওপর ফ্লাইওভার অথবা বাইপাস নির্মাণের একটি প্রকল্পও মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বান্তবায়ন হওয়ার কথা আছে। কিন্তু এটিও মন্ত্রণালয় কিংবা একনেকের অনুমোদন এখনো পায়নি।

তবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় জাপানি প্রতিষ্ঠান মারুবিনির চট্টগ্রামের শিকলবাহা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজটি করার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজটি করছে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ। পুরো সড়ককে টোল সড়ক হিসেবে ধরে এ সড়কটি উন্নয়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কারণেই মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি প্রশস্ত করার সব ধরনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।

সওজের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিপিপির আওতায় জাপানের প্রতিষ্ঠান মারুবিনিকে সড়কটি প্রশস্তকরণের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে এ কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ মারুবিনি সড়ক প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে তা জানতেম চেয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজটি শুরু হবে তা নিয়ে সঠিকভাবে দিনক্ষণ তারা বলছে না। কোভিডের কারণে বর্তমানে সম্ভাব্যতা জরিপের কাজও বন্ধ। আর মারুবিনিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সড়কটি সম্প্রসারণ করবে এমন কৌশলগত অবস্থানেও সরকার নেই।

সড়কটি নিয়ে ইতোপূর্বে পরিকল্পনা কমিশনে আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় এটি ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, পুরোটা ফ্লাইওভার কিংবা সড়ক হিসেবে সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। বর্তমানে জরিপ কাজ করা হলেও মারুবিনি শেষ পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ করবে কিনা তা আগামী ডিসেম্বরে জানা যাবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দোহাজারী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, শিকলবাহার ওয়াই জংশন থেকে দোহাজারী শঙ্খ নদীর সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটআর সড়কটি আপাতত ৩৪ ফুট প্রস্থ করা গেলে এ সড়কের যানজটের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভূমি অধিগ্রহণের ঝামেলাও নেই। তবে এ নিয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে দুই বছর সময় লাগবে। ২০১৬ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দোহাজারি কার্যালয় থেকে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

এ ছাড়া মহাসড়কটির যানজট ও বাজারমুক্ত করতে পাঁচটি স্থানে বাইপাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। এগুলো হলো পটিয়া, দোহাজারী, কেরানীহাট, লোহাগাড়া ও চকরিয়া। ইতোমধ্যে পটিয়া বাইপাসের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সড়কটি দুই লেনের এবং সেতু-কালভার্ট চার লেনের হওয়ায় যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে হরহামেশা এখানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অবশিষ্ট চারটি স্থানে বাইপাস, না ফ্লাইওভার হবে তা নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সড়কটিতে একমাত্র ক্রস বর্ডার প্রকল্পের আওতায় চারটি সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো হলো পটিয়ার ইন্দুরপুল, চন্দনাইশ, শঙ্খ নদীর সেতু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর সেতু। এই চারটি সেতু ছয়লেন করে নির্মাণ করা হচ্ছে।

সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে একাধিক প্রকল্পের কথা বলা হলেও কোনোটির কাজ না হওয়ায় আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এ সড়কে দ্রুত যানবাহন বাড়ছে। কিন্তু সড়কটি অতি সরু। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে বুয়েটের জরিপ কিংবা জাপানি প্রতিষ্ঠান মারুবিনির কার্যক্রম এক ধরনের বন্ধই আছে। তার পরও আগামী ৬ জুন জাইকাসহ এ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আছে। আশা করছি সেখান থেকে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। তাও না হলে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মহিপুরে পাঁচ কিমি কাঁচা সড়কে হাঁটুজল, দুর্ভোগে পথচারী

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রকল্পজট

প্রকাশের সময় : ০৬:১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১

চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু থেকে শিকলবাহা ওয়াই জংশন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের প্রশস্ততা ১০০ ফুট। আবার কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে ওয়াই জংশন পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কটি ১১৮ ফুট প্রস্থ। আর এ দুই সড়কের সংযোগস্থলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১৮ ফুট। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে দোহাজারী শঙ্খ সেতু পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশকে ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে ২০১৬ সালে পাঠানো হয়।

মন্ত্রণালয় ৩০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে সায় দেয়নি। এর বাইরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাঁচটি বড় স্টেশন ও বাজারের ওপর ফ্লাইওভার অথবা বাইপাস নির্মাণের একটি প্রকল্পও মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বান্তবায়ন হওয়ার কথা আছে। কিন্তু এটিও মন্ত্রণালয় কিংবা একনেকের অনুমোদন এখনো পায়নি।

তবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় জাপানি প্রতিষ্ঠান মারুবিনির চট্টগ্রামের শিকলবাহা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজটি করার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজটি করছে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ। পুরো সড়ককে টোল সড়ক হিসেবে ধরে এ সড়কটি উন্নয়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কারণেই মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি প্রশস্ত করার সব ধরনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।

সওজের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিপিপির আওতায় জাপানের প্রতিষ্ঠান মারুবিনিকে সড়কটি প্রশস্তকরণের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে এ কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ মারুবিনি সড়ক প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে তা জানতেম চেয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজটি শুরু হবে তা নিয়ে সঠিকভাবে দিনক্ষণ তারা বলছে না। কোভিডের কারণে বর্তমানে সম্ভাব্যতা জরিপের কাজও বন্ধ। আর মারুবিনিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সড়কটি সম্প্রসারণ করবে এমন কৌশলগত অবস্থানেও সরকার নেই।

সড়কটি নিয়ে ইতোপূর্বে পরিকল্পনা কমিশনে আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় এটি ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, পুরোটা ফ্লাইওভার কিংবা সড়ক হিসেবে সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। বর্তমানে জরিপ কাজ করা হলেও মারুবিনি শেষ পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ করবে কিনা তা আগামী ডিসেম্বরে জানা যাবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দোহাজারী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, শিকলবাহার ওয়াই জংশন থেকে দোহাজারী শঙ্খ নদীর সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটআর সড়কটি আপাতত ৩৪ ফুট প্রস্থ করা গেলে এ সড়কের যানজটের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভূমি অধিগ্রহণের ঝামেলাও নেই। তবে এ নিয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে দুই বছর সময় লাগবে। ২০১৬ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দোহাজারি কার্যালয় থেকে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

এ ছাড়া মহাসড়কটির যানজট ও বাজারমুক্ত করতে পাঁচটি স্থানে বাইপাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। এগুলো হলো পটিয়া, দোহাজারী, কেরানীহাট, লোহাগাড়া ও চকরিয়া। ইতোমধ্যে পটিয়া বাইপাসের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সড়কটি দুই লেনের এবং সেতু-কালভার্ট চার লেনের হওয়ায় যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে হরহামেশা এখানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অবশিষ্ট চারটি স্থানে বাইপাস, না ফ্লাইওভার হবে তা নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সড়কটিতে একমাত্র ক্রস বর্ডার প্রকল্পের আওতায় চারটি সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো হলো পটিয়ার ইন্দুরপুল, চন্দনাইশ, শঙ্খ নদীর সেতু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর সেতু। এই চারটি সেতু ছয়লেন করে নির্মাণ করা হচ্ছে।

সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে একাধিক প্রকল্পের কথা বলা হলেও কোনোটির কাজ না হওয়ায় আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এ সড়কে দ্রুত যানবাহন বাড়ছে। কিন্তু সড়কটি অতি সরু। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে বুয়েটের জরিপ কিংবা জাপানি প্রতিষ্ঠান মারুবিনির কার্যক্রম এক ধরনের বন্ধই আছে। তার পরও আগামী ৬ জুন জাইকাসহ এ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আছে। আশা করছি সেখান থেকে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। তাও না হলে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে।