আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
‘এই খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে একটি ভোট হল ফিলিস্তিনিদের জীবনের অধিকারের প্রতি সমর্থন। বিপরীতে, এর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া মানে তাদের উপর আরোপিত নৃশংস সহিংসতা এবং সম্মিলিত শাস্তির অনুমোদন।’ নিরাপত্তা পরিষদে আলজেরিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত অমর বেঞ্জামার এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আবেগকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়নি। তাই গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আনা খসড়া প্রস্তাবে আবারো আবারও ভেটো দিলো যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। এতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্য পক্ষে ভোট দেয়। ভোট দান থেকে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য। আর একমাত্র দেশ হিসেবে এতে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের ভেটো (আমি মানি না) ক্ষমতা রয়েছে। এদের কোনো একটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে তা পাস করা যায় না।
জাতিসংঘে আলজেরিয়ার দূত আমার বেন্ডজামা ভোটের আগে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছিলেন, এই খসড়া প্রস্তাবে ভোট হলো ফিলিস্তিনিদের জীবনের অধিকারের প্রতি সমর্থন। বিপরীতে, এর বিরুদ্ধে ভোটদান তাদের ওপর নৃশংস সমন্বিত সহিংসতা ও শাস্তির প্রতি সায় দেয়া।
ভোটের পর ব্রিটেনের জাতিসংঘ দূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, এই খসড়া প্রস্তাবের মতো শুধু যুদ্ধবিরতির আহ্বানে কাজ হবে না। লড়াই বন্ধ এবং পুনরায় তা শুরু হওয়া ঠেকানোর উদ্যোগের শুরুর উপায় হলো জিম্মিদের মুক্তি ও ত্রাণের প্রবেশসহ একটি বিরতি।
১৫টি দেশের মধ্যে ১৩টি দেশের যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে— ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধ হোক— এমনটি চাচ্ছে বিশ্বের সব দেশ।
আলজেরিয়ার তোলা এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেবে সেটি আগে থেকেই সবাই জানতেন। তবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যে যুদ্ধ বন্ধ চায়, সেটি দেখাতে নতুন এই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতির এ প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে ওঠার আগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা প্রস্তাব দেয়। এতে বলা হয়, ‘উপযুক্ত সময়ে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে এবং ত্রাণের ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে। এর বদলে হামাসকে ইসরায়েলের সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।’
রয়টার্সের হাতে আসা খসড়া অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদকে যত দ্রুত সম্ভব গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়া ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সব বাধা তুলে নেয়ার কথাও আছে খসড়ায়।
খসড়া প্রস্তাবে রাফাহতে স্থল আক্রমণ না চালাতে ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তা পরিষদের জোর দিয়ে বলা উচিত যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের স্থল অভিযান চালানো উচিত নয়।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও প্রায় ২৫০ জনকে ধরে গাজায় নিয়ে আসে। এরপর গাজায় বর্বরতা শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত এ উপত্যকায় ২৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার।