নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খেলতে চাইলে ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় এসো।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সাজার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ফখরুল এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা- এই তিনটি ইউনিট এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন না করে ক্ষমতায় যেতে পারলে কী আনন্দ, তাই না! খুব তো বলেছিলা খেলতে চাও, তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় আসো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে সরানোর সংকট শুধু বিএনপির নয়, এটা জাতির সংকট। দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে দানবকে পরাজিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের কথার মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিবেক আছে, কিন্তু কথার মধ্যে মিল নেই। চতুরদিকে অন্ধকার দেখছে সরকার।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বলল, কিংবা যুক্তরাজ্য কী বলল, বা ভারত কী বলল তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নাই। আমাদের দরকার, আমাদের মানুষ কী বলছে। আমাদের মানুষ পরিষ্কার করে বলছে, ‘‘বিদায় হও, আর সময় নাই’’। যেতে হবে বন্ধুগণ, এই সরকারকে যেতেই হবে।
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে এই জনতা। সাজা দেয়ার আগে চিন্তা করবেন আপনাদেরও হিসাব দিতে হবে।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই যে চেয়ার ছাড়তে চায় না। একবার বসে, ওখান থেকে আর উঠতে চায় না। কিন্তু এবার, তাদের কি চেয়ারে বসে থাকতে দেওয়া যাবে, বন্ধুগণ? এবার কি আমরা ওই নির্বাচন হাসিনার অধীনে করতে দেব? তাহলে বন্ধুগণ, এবার মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ। এবার মরণপণ যুদ্ধ করে, আমাদের সবাইকে, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে (আওয়ামী লীগকে) পরাজিত করতে হবে।
বর্তমান সরকারকে ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা দেশে ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েম করেছে। আর এই ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে জনগণকে উদ্ধারে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার নেতৃত্বে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ, সেই তারেক রহমানকে আজকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। শুধু তারেক রহমানকেই নয়, যিনি কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, সেই ডা. জুবাইদা রহমানকেও সাজা দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি তারেক রহমানের সহধর্মিণী।
তিনি বলেন, এ সরকার ভীরু ও কাপুরুষ। তারা প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে আদালতের সাজা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডা. জুবাইদা রহমান যিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তিনি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক। তার পারিবারিক সম্পত্তি কয়েক হাজার কোটি টাকা, তাকে কয়েক লক্ষ টাকার এফডিআরের জন্য সাজা দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি তো সেই পাকিস্তান আমলে.. সেই মামলায় তোমাদের নেতাকেও জেলে যেতে হয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাবলে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার রায় হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেও প্রচুর মামলা ছিল। তারেক রহমানের সহধর্মিণী, যার পারিবারিক সম্পত্তি ১০ হাজার কোটি টাকা, তাকে ৩৫ লাখ টাকার মামলা দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মামলা দিয়েছে, কীসের? দুর্নীতির! আজকে যিনি অবৈধ ক্ষমতা দখল করে আছেন, তার বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা ছিল দুর্নীতির। সেগুলো তো এই বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় তার দুর্নীতির ব্যাপারে বহু ছাপা হয়েছে। তিনি পিঠে দিয়েছেন কুলো, কানে দিয়েছেন তুলো।
নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশে আসায় বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব তাদের উদ্দেশে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে আজ ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ইনশাল্লাহ, দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে দানবকে পরাজিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদেরকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছেন‒ কোনো চাপে আছেন কিনা। তিনি বললেন, কোনো চাপে নেই, তবে বিবেকের চাপে আছি। আসলে সরকার চোখে অন্ধকার দেখছে। তাই তারা একেক সময় একেক কথা বলছেন।
তিনি বলেন, আজকে দুর্নীতির অভিযোগে তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমান সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধেও ১৫টি মামলা হয়েছিল। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মামলাগুলো তারা নাই করে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সরকার আজ তাদের পদন্নোতি দিচ্ছে। আজ সমগ্র দেশে দুর্নীতি মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিনা অপরাধে আমাদের নেতাকর্মীদের জেলে নেওয়া হচ্ছে, ফাঁসির আদেশ দেওয়া হচ্ছে। যারা অবৈধ রায় দিচ্ছেন সেইসব বিচারপতিদের আল্লাহর কাছে একদিন জবাব দিতে হবে। ন্যায়বিচারের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। অতীতের কথা সবসময় স্মরণ রাখবেন। সেই স্লোগানের কথা ভুলে যাবেন না‒ বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা।
তিনি বলেন, আজকে চাল-ডাল, বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বেড়েছে। সেদিকে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভিসা পান না। ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। সেদিকে সরকারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের একটাই চিন্তা কীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবি রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।