শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ায় এসপি কাণ্ডে হাইকোর্টের নতুন নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১
কুষ্টিয়ায় এসপি কাণ্ডে হাইকোর্টের নতুন নির্দেশনা
এসপি তানভীর আরাফাত

গত ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন চলার সময় ওই ভোট কেন্দ্রেই পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী তখন সেখানে ছিলেন।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী হাই কোর্টের কাছে শঙ্কা জানানোর পর তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চের শুনানিতে যুক্ত হয়ে শাহজাহান আলী বৃহস্পতিবার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে আদালত এ আদেশ দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শাহজাহান আলী আজ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন উনার নিরাপত্তা বিধানের জন্য। এর আগে গতকাল হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ওই কেন্দ্রের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুল দিয়েছিল।

আজকে ওই বেঞ্চটি না থাকায় এই আদালতে নিরাপত্তা চাইলে আদালত পুলিশের মহাপরিদর্শককে আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

শাহজাহান আলী কেন নিরাপত্তা চাইছেন জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোর্ট তাকে জিজ্ঞেস করেছিল তিনি কী বলতে চান। তিনি অভিযোগ করেছেন, গতকাল গোয়েন্দা বিভাগের কিছু লোক তাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তার কাছ থেকে কিছু কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষরও নিয়েছে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ‘লঙ্ঘনের’ অভিযোগের বিষয়ে ব্যখ্যা দিতে বুধবার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করে হাই কোর্ট। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাকে হাই কোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

সেই সাথে এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে আদালত। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর নজরে আসার পর বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই রুল ও আদেশ দেয়।

পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে তলবের আদেশের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রে বিচারিক দায়িত্ব পালন করছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান। দায়িত্বরত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ওই পুলিশ সুপার যে আচরণ করেছেন, তা আদালত অবমাননার শামিল। উনার (এসপি) এ কর্মকাণ্ড শুধু বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ নয় বরং পুরো বিচার বিভাগের প্রতি প্রচণ্ড আঘাতের শামিল। উনার এই কর্মকাণ্ডকে আমরা (আদালত) এড়িয়ে যেতে পারি না এবং বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ারও সুযোগ নাই। উনি (পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত) শুধু গুরুতর আদালত অবমাননাই করেননি, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করেছেন।

গত ১৬ জানুয়ারি ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মহসিন হাসানের অভিযোগ, সেদিন দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত এবং পুলিশ সদস্যরা তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেন এবং দায়িত্ব পালনে বাধা দেন।

সেজন্য পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিচার বিভাগীয় এই কর্মকর্তা। সে আবেদনের অনুলিপি আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়েও পাঠানো হয়।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যে ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের সময় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই ঘটনা ঘটে।

মহসিন বলেন, ওই কেন্দ্রে ‘কতিপয় ব্যক্তিকে’ ভোট কেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে তখন তিনি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বুথের বাইরে ডেকে আনেন। তখনই এসপি তানভীর আরাফাতসহ ৪০/৫০ জন ওই ভোটকেন্দ্রে ঢোকেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন।

তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে উনাকে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ফেব্রুয়ারিতে

এরপরেও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন- ‘আপনি কে? কী করেন এখানে?’ আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত স্বরে বলেন, ‘আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে’। আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি।

লিখিত অভিযোগে বিচারিক হাকিম মহসিন বলেন, পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গী ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯,৭০,৭৪,৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করছি।

তবে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত অভিযোগ অস্বীকার করে বুধবার বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। তিনি (মহসিন হাসান) তার দায়িত্ব পালন করেছেন। আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া