শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:০৬ অপরাহ্ন

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রন্টলাইনে নারীরা

রিপোর্টারের নাম
আপডেট : সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০

মহামারী করোনায় নারীরা যে সামনে থেকে লড়াই করছেন। সরাসারি মহামারী মোকাবেলায় ভূমিকা রাখছেন। সেটা হতে পারে, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সিং হোমে যারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে কিংবা কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট।

মহামারীর এই কঠিন সময়ে তারা নিজেদের বাচ্চা ও পরিবার সামলানোর পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে অন্য লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছেন।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এমা রবিনস একটি ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান নুয়াসে গিয়েছিলেন, অন্য দুজনের সঙ্গে।

তিনি ছাড়া বাকি দুজন ছিলেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জেতা অভিনেতা শন পেন, প্রখ্যাত ভিডিও এবং ফিল্ম ডিরেক্টর সাম বায়ের। তারা তিনজন একসঙ্গে নাভাহো ন্যাশনে যাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট জোনথন নেজের সঙ্গে মিটিং করতে।

তাদের মিটিংটি ছিল পেনের মানবিক সহায়তা সংগঠন কমিউনিটি অর্গানাইজড রিলিফ অ্যাফোর্ট (কোর) কীভাবে কভিড-১৯-এর টেস্টিংসহ মহামারীকালে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে। সে মিটিংয়ে রবিনসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। শেষ মুহূর্তের আমন্ত্রণ অবশ্য ৩৩ বছর বয়সী এই আর্টিস্ট এবং কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ফিরিয়েই দিতে যাচ্ছিলেন, তবে তার নিজের লস অ্যাঞ্জেলেস অফিসে অনেক কাজ ছিল। কিন্তু তিনি আবার যেখানে বড় হয়েছেন সেখানে আকস্মিক ভ্রমণের সুযোগও হাতছাড়া করতে চাচ্ছিলেন না।

নাভাহোতে বসবাসকারী এক-তৃতীয়াংশ লোক পরিষ্কার পানি এবং ঘরের অভ্যন্তরে পানি পায় না। ফলে মহামারীর কারণে বিপজ্জনক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে। এদিকে সংক্রমণের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছিল। ফলে ফেডারেল সরকার নাভাহো ন্যাশনে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

রবিনস বলেন, টাকা কীভাবে খরচ করবে সে ব্যাপারে সবার আলাদা মতামত ছিল। কিন্তু দেখেন, আমাদের সংক্রমণের হার এত বেশি কেন? কারণ মানুষ পরিষ্কার পানি পাচ্ছে না। তাদের ভ্রমণ করতে হচ্ছে, তাদের হাত ধোয়ার জন্য পানি দরকার, আর সেখানে কোনো স্যানিটেশনের ব্যবস্থাও নেই। যা লোকজনকে মানসিকভাবে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। আমি জানতাম, আমি যদি আলোচনায় অংশ নিই, তবে আমি ভূমিকা রাখতে পারতাম।

রবিনসের এই বাস্তবিক উদ্যোগ আমাদের দেখিয়ে দেয় কভিড-১৯ চলকালে নারীরা যে সামনে থেকে লড়াই করছেন সেটি, যারা কিনা সরাসারি মহামারী মোকাবেলায় ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু যখন জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নেতৃত্বদানের বিষয় সামনে আসে তখন নারীরা স্পষ্ট এক বৈষম্যের শিকার হন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যকর্মীদের ৭০ শতাংশ যেখানে নারী, সেখানে মাত্র ২৫ শতাংশ নারী নেতৃত্ব দেয়ার মতো অবস্থায় আছেন। ফেব্রুয়ারিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ইউএস টাস্কফোর্সে একটি ছবি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল কারণ, সেই ছবিতে কেবল পুরুষদের দেখানো হয়েছিল।

স্বাস্থ্যসেবার পরিসরের ভেতর থাকা নারীরা কভিড-১৯ সংকটকে চিহ্নিত করেছেন এমন একটি চিত্র হিসেবে যা তাদের নেতৃত্বের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করেছে। অনেক বেশি নারী বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া অনিবার্যভাবে ইতিবাচক পরিবর্তনে পরিবর্তিত হবে, বলেছেন জয়েন্ট ইউনাইটেড ন্যাশন প্রোগ্রাম অন এইচআইবি/এইডের (ইউএন এইডস) নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়ানিমা।

কয়েক দশকের রাজনৈতিক কার্যক্রম বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের শীর্ষে নেতৃত্বে বায়ানিমার উঠে আসায় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, আমার গরিব দেশ থেকে উঠে আসা আরো অনেক নারীর মতো। একের পর এক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়।

কভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে বায়ানিমা বলেন, বিশ্বকে নারী নেতৃত্বের সফলতার দিকে আর খুব বেশি তাকানোর প্রয়োজন নেই। জার্মানি, নরওয়ে ও নিউজিল্যান্ড বিস্তৃতভাবে প্রশংসিত হচ্ছে টেস্টিংয়ে উন্নতি, কন্টাক্ট ট্র্যাকিং এবং করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি থামানোর জন্য। একটি গবেষণা বলছে, যেসব দেশে নেতৃত্বের অবস্থানে নারী আছেন সেখানে কভিড-১৯-এ নিশ্চিত মৃত্যু ছয় ভাগ কম, যেসব দেশে শীর্ষস্থানে পুরুষ আছে তার তুলনায়। সে সঙ্গে নারী নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো ভাইরাসের কার্ভ নিম্নগামী রেখে এখন নিরাপদভাবে সবকিছু খোলার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

বায়ানিমাা বলেন, জেসিন্ডা আরডার্নের (নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী) মতো কারো কথা ধরা যাক। তিনি প্রথম মেয়াদে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। ভূমিকম্প মোকাবেলা করতে হয়েছে, তাকে দেখতে হয়েছে সন্ত্রাসী হামলা এবং তাকে এখন কভিড-১৯ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কিন্তু তিনি বেশ প্রশংসিত হচ্ছেন, কারণ বৃত্তের বাইরে গিয়ে উদ্যোগ নিতে পারছেন।

অর্থনীতিবিদ এবং হেলথ ওয়ার্কফোর্স বিশেষজ্ঞ মিচেলে ম্যাকইসাক বলেন, যদিও গবেষকরা জানিয়েছেন কভিড-১৯-এর জটিলতার ক্ষেত্রে পুরুষদের অনেক বেশি ভুগতে হচ্ছে। তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সামনের সারির নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা জেনেছি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি এবং পিপিই কীভাবে পরতে হবে সে বিষয়ক ট্রেনিং না থাকায় মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে, বেশির ভাগ উপলব্ধ পিপিই ডিজাইন করা হয় পুরুষ দ্বারা এবং তা প্রায়ই মহিলাদের দেহের সঙ্গে মানায় না।

স্বল্প বেতন, নিরাপত্তাহীন চুক্তি এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়ে সামনের সারির নারী স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশ দুর্বল অবস্থায় আছেন। এ বিষয়ে হেলথ লিডারশিপে লৈঙ্গিক সমতা নিয়ে কাজ করার জন্য ওমেন ইন গ্লোবাল হেলথের প্রতিষ্ঠাতা রূপা দত্ত বলেন, এ মহামারী দেখিয়েছে সমাজের ওপর আসা আঘাত এলে নারীরা প্রথম লড়াই শুরু করেন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: