নিজস্ব প্রতিবেদক :
কিছুটা স্বস্তি ফিরছে রাজধানীর সবজির বাজারগুলোতে। নানা রকম শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে রাজধানীর বাজারগুলো। গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমেছে সবজির দাম। ডিম, মাছ, মুরগি, আলুসহ বেশ কিছু সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে লম্বা বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, গোল বেগুন ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০-৫০ টাকা মান ও সাইজভেদে লাউ ৪০-৬০ টাকা, জালি ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অধিকাংশ সবজি দুই তিন সপ্তাহ আগে ৩০-৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহেও ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়াও নতুন সবজি হিসেবে ফুলকপি মাঝারি সাইজের ৪০-৫০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এসব সবজির দাম ২০-৩০ টাকা বেশি ছিল। কমেছে আলুর দাম। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা। তবে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা।
এদিকে পুঁই শাক ৩০ টাকা, পাট শাক আটি ১০-১৫ টাকা, লাল শাক ১০-১৫ টাকা, পালং শাক ২০-২৫ টাকা, মুলা শাক ১৫-২০ টাকা, সরিষা শাক ১০ টাকা আটি বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারে দোকানের তুলনায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রত্যেক সবজির দাম ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলু এখন ৪৫ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২৫ টাকা কমেছে আলুর দাম।
এদিকে কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা।
দাম কমেছে আদা ও রসুনের। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা এবং দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে, সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি যাচ্ছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙাস মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, টাকি মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই মাছ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি সাইজের ইলিশ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।
এছাড়া, প্রতি কেজি গলদা চিংড়ি ১১০০ টাকা ও সাইজে একটু ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি আইড় মাছের দাম ৭০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা ও রুপচাঁদা আকৃতিভেদে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট কাঁচকি মাছ প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, ছোট সাইজের বাইম মাছ প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাঝারি শোল মাছ প্রতি কেজি ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ টাকায় ও খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।
খুচরা বাজারে এখন প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ৪৮ টাকা। এ এক হালি ডিম দুই সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকার বিক্রি হয়েছে। এদিকে, বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
বাজারে ২৮ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। আগে কেজি ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। পাইজাম চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, যা আগে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকায়। নাজিরশাল চালের কেজি ৬৮ টাকা, আগে বিক্রি হত ৬৫ টাকায়। ভালো মানের নাজিরশাল চালের কেজি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়, আগে কেজি ছিল ৭০ টাকা। পোলাওয়ের চালের কেজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে।
রাজধানীর মিরপুর সংলগ্ন বাজারে পণ্য কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আকাশ বলেন, বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবুও ৫০-৬০ টাকার নিচে কিছুই নেই। যদিও কয়েকদিন আগে এসব সবজির দাম আরও বাড়তি ছিল। কিন্তু মাছের দার এখনো অনেক বেশিই যাচ্ছে। অল্প কিছু পাঙাস, তেলাপিয়া ও চাষের কই মাছ তাও কেনা যায়। কিন্তু ভালো কোনো মাছই আমরা কিনে খেতে পারি না। কারণ ওইসব মাছের দাম এতটাই বেশি যে, আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা শখ করে ছাড়া কিনতে পারছে না।
সবজির দামের বিষয়ে একই বাজারের সবজি বিক্রেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, শীত মৌসুম প্রায় চলে আসার কারণে সব ধরনের সবজির দামই আগের চেয়ে কমেছে। পুরো শীতে এসবের দাম আরও কমবে। তবে বর্তমানে দেশে হরতাল-অবরোধ চলার কারণে পরিবহন ভাড়া আগের চেয়ে বেড়ে গেছে এবং পরিবহন পাওয়াও কঠিন। এসব কারণ না থাকলে বর্তমান বাজারের চেয়েও আরও কম দামে সবজি পাওয়া যেত।
মাছের বাড়তি দামের কারণ জানিয়ে শনির আখড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা আসিফ হোসেন বলেন, মাছের এরকম দাম আরও অনেক আগেই থেকেই চলছে। তবে হরতাল-অবরোধে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে মাছ কম সরবরাহ হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন ভাড়াও বর্তমানে বাড়তি। এসব মিলিয়েই বর্তমানে মাছের বাজার বাড়তি যাচ্ছে। তবে যখন থেকে মাছের খাবারের দাম বেড়েছে, মূলত সেই সময় থেকেই মাছের দাম বেড়েছে। এরপর আর কমেনি। সেইসঙ্গে বর্তমান হরতাল অবরোধের কারণে পরিবহন সংকটে মাছের দর আরেক দফা বাড়তি যাচ্ছে।