শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

কভিড-১৯ : ভ্যাকসিন কি সবার জন্য সহজলভ্য হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

কভিড-১৯-এর মহামারীকে থামাতে একটি ভ্যাকসিনের সন্ধান তীব্রভাবে চলছে। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি, দাতারা ভ্যাকসিন বিকাশ ও তৈরির জন্য তহবিলে অর্থ দিয়ে যাচ্ছে। প্রচলিত ও নতুন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে ভ্যাকসিনের বিকাশের জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র এ অন্বেষণের ফলে হয়তো ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে ভ্যাকসিন বাজারে থাকতে পারে।

কিন্তু কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন কি অবাধে পাওয়া যাবে এবং এটি কি সাশ্রয়ী হবে? আন্তর্জাতিক বৌদ্ধিক সম্পত্তি পদ্ধতি ভ্যাকসিনের অধিকার বরাদ্দ করে আবিষ্কারক কিংবা মালিকের জন্য। এই অধিকার সীমিত সময়ের জন্য মঞ্জুর করা হয়—ডিজাইনের অধিকার ১৪ বছরের জন্য,

বেশির ভাগ জায়গায় প্যাটেন্টের অধিকার ২০ বছরের জন্য।

এই সময়ের জন্য মালিকের পণ্যটির ওপর একচেটিয়া অধিকার রয়েছে এবং নিজের মনমতো দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই বিধানের ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাদের প্রয়োজন সেসব লোকের এটি পাওয়া সীমায়িত হয়ে পড়ে।

উদাহরণস্বরূপ দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সঙ্গে প্রায় ৪০টি ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মের আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এটি ছিল এইচআইভির চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল মেডিসিন স্বল্প মূল্যে তৈরির উদ্যোগ রুখতে। এমনকি লাখো মানুষের জীবন সংকটে থাকার পরও জনস্বাস্থ্য বৌদ্ধিক সম্পত্তির পেছনে পড়ে গিয়েছিল। এই লড়াই চলেছে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে এটি থামে এবং মামলা বাতিল করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারী এই গতি ও হিসাব কি বদলাতে পারবে?

বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং
বর্তমান ট্রেন্ডের দিকে তাকালে আমরা দুই ধরনের শক্তিশালী বৌদ্ধিক সম্পত্তির পদ্ধতিকে কাজ করতে দেখি। একদিকে জাতীয় সরকারগুলো তাকিয়ে আছে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিংয়ের দিকে। যার মাধ্যমে তারা কোনো তৃতীয় পক্ষকে প্যাটেন্ট মালিকের অনুমতি ব্যতীত ভ্যাকিসন তৈরি, ব্যবহার কিংবা বিক্রির অনুমতি দিতে পারে।

উদহারণস্বরূপ ১৮ মার্চ ইসরায়েল ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি হেটেরোকে কালেটরার জেনেরিক ভার্সন তৈরির জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স ইস্যু করে, যার প্যাটেন্ট রাখা আছে এবিবিভির কাছে। কালেটরা হচ্ছে এইচআইভি-১-এর অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি মেডিসিন এবং ধারণা করা হচ্ছে এটি কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

একইভাবে করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্যাটেন্ট মালিকের অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় পক্ষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম বানানো, ব্যবহার কিংবা বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। চিলির সংসদের নিম্ন কক্ষ ও একুয়েডরের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি কভিড-১৯ এ ধরনের রেজল্যুশন পাস করেছে। একই রকম উদ্যোগ নিয়েছে কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্সও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও কভিড-১৯ সম্পর্কিত মেডিসিনাল রাইট কেনার উপায় খুঁজছে এবং প্যাটেন্টের একটা পুল তৈরির চেষ্টা করছে, যেখানে সংকট সমাধানে সহায়তার জন্য যে কেউ ঢুকতে পারে।

অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশ

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পেতে এরই মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মে মাসে ফ্রান্সের ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম সানোফি বলেছে, আবিষ্কৃত যেকোনো ভ্যাকসিনের প্রথম শিপমেন্ট যাবে আমেরিকায়। কারণ তারা উচ্চঝুঁকি নিয়ে প্রাথমিক বিনিয়োগ করেছে।

যেখানে গিলিয়াড প্রশংসিত হয়েছে তাদের রেমডেসিভির ওষুধের প্যাটেন্ট তিনটি ভারতীয় জেনেরিক ড্রাগ ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে দেয়ার জন্য, যাদের কিনা ১২৭টি দেশে প্রবেশের সক্ষমতা রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই প্রবেশ লাভজনক বাজারের জন্য নয়, ওষুধে তারা যত বিনিয়োগ করেছে তা পোষাতে তাদের দীর্ঘ সময় লাগবে।

বাইরে যাওয়ার উপায়
এর বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় আছে? বিনিয়োগ করা ও উদ্ভাবকের অধিকারকে নষ্ট না করে ভ্যাকসিনের পথে সহজ ও সাশ্রীয় প্রবেশের কোনো উপায় আছে কি?

জরুরি স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্যগুলোর বৌদ্ধিক মালিকরা মানুষের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে একটি ভারসাম্যমূলক উপায় বের করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ভ্যাকসিন প্যাটেন্ট মালিকদের তাদের বৌদ্ধিক অধিকার স্থানান্তরযোগ্য করার অধিকার দেয়া যেতে পারে। এর অর্থ কোম্পানি তাদের পছন্দমতো পণ্যে অতিরিক্ত প্যাটেন্ট প্রদান করতে পারে। এটি প্যাটেন্ট মালিকের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে না।

সরকারের ভূমিকা
এক্ষেত্রে সরকার প্যাটেন্ট মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করার মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে উপযুক্ত মূল্যে লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারে। তদুপরি, পাবলিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রস্তুতকরণের সুবিধাকে উৎসাহিত করাও একটা বিকল্প হতে পারে। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা সংস্থায় বিকশিত ভ্যাকসিনের কেবল ঘরোয়া উদ্ভাবনকে উৎসাহিত না করে বরং সাশ্রয়ী উপায়ে পাওয়ার চ্যালেঞ্জগুলোকেও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। বণিক বার্তা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: