কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
কক্সবাজারে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থার (বাইসস) গোপন বৈঠক থেকে আটক ১৯ ইউপি সদস্যের মধ্যে ১৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় অপর চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে তাঁদের কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে শহরের কলাতলীর ইউনি রিসোর্টে নামের আবাসিকর হোটেলের পঞ্চম তলার একটি কক্ষ থেকে গোপন বৈঠক চলাকালে ১৯ জন ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় নাশকতার মামলাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়জুল আযীম বলেন, কারাগারে পাঠানো ইউপি সদস্যরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির নেতা। জেলার বিভিন্ন থানায় করা মামলার আসামি তাঁরা।
কারাগারে পাঠানো ইউপি সদস্যরা হলেন- কক্সবাজারের রামুর কাউয়ারখোপ ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. আজিম মিয়া (৩৫), ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. কায়েস (৪২), ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী (৫৫), জোয়ারিয়ানালার ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন (৩৭), চকরিয়ার সাহারবিল ইউপির ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জসিম উদ্দিন (৪৮), ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার জুনায়েদুল হক (৪০), পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ইরফানুর রহমান (৪০), বদরখালীর ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার কফিল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর (৪৬), বমুবিলছড়ি ইউপির ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. বেলাল উদ্দিন (৪০), ২নং ওয়ার্ড মেম্বার শফিকুর রহমান (৪২), কোনাখালী ইউপির ১নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কালাম (৫৫), কাকারা ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার নজরুল ইসলাম (৩৫), শাহারবিল ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল জলদাস (৩৩), টেকনাফ সদর ইউপির ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহ আলম (৩৯) ও কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ মিয়া জঙ্গি (৫৪)।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস) কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে হোটেলটিতে বৈঠক চলছিল। ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক এ বৈঠক চলাকালে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেখানে যান। এ সময় ৪০ জনকে আটক করে পুলিশ। প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার রাত ১২টায় পুলিশ ১৯ জন ইউপি সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়জুল আযীম বলেন, বৈঠকের বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলে তল্লাশি চালায়।
সভায় উপস্থিত কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, বাইসস কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বাইসস চেয়ারম্যান ও আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে আতাউল্লাহ খান নামের এক রাজনৈতিক নেতার উপস্থিত থাকার কথা প্রচার হয়েছিল। রাত ৯টার দিকে পুলিশ ও ২০-২৫ জন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা মিলে হোটেলটি ঘেরাও করে তল্লাশি শুরু করেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামীপন্থী ইউপি সদস্যরা হোটেলে গোপনে বৈঠক করে সরকারবিরোধী পরিকল্পনা করছিলেন।
পুলিশের হাতে আটক টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জহির আহমেদ (পরে ছাড়া পান) বলেন, জেলার ইউপি সদস্যের নিয়ে গঠিত সংগঠন সভা ডেকেছিল। সেখানে দেশের ক্রান্তিকালে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ অতর্কিতভাবে পুলিশ ও ছাত্র সমন্বয়কেরা সেখানে আসেন এবং আমাদের আটক করেন। ইউপি সদস্যরা যদি গোপন বৈঠক করতেন, তাহলে সড়কের পাশে হোটেলে অনুষ্ঠান করতেন না।
সভায় উপস্থিত থাকা মহেশখালীর ইউপি সদস্য সেলিম উল্লাহ বলেন, বৈঠকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ সব মতাদর্শের সমর্থক ৭০ জনের মতো ইউপি সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। সেখান থেকে পুলিশ আওয়ামী লীগ সমর্থক ১৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে উৎখাত করতে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার দোসর ইউপি সদস্যরা হোটেলকক্ষে জড়ো হয়ে গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আওয়ামী লীগের সমর্থক ১৯ জন ইউপি সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শনিবার তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা কক্সবাজারে কাউকে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে দেবে না।