নিজস্ব প্রতিবেদক :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, দেশের মানুষ বারবার আশাহত হয়েছে। তারা যেন আর আশাহত না হয়। কারণ এবার তারা হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে প্রামাণ্যচিত্র ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে আদর্শিক গুণ্ডাদের লালন-পালন করেছেন হাসিনা। নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞকে ন্যায্যতা দিয়েছে তারা। এই সিস্টেম এমনভাবে বানিয়েছে, যেখানেই হাত দিই সেখানেই আদর্শিক গুণ্ডা, সেখানেই লীগের দোসর পাই। হাসিনার ফ্যাসিবাদে লীগ কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশের অংশ ছিল। শুধু প্রশাসন ও পুলিশযন্ত্র এ ফ্যাসিবাদের অংশ না, পুরো জাতিকে দূষিত করে রেখে গেছে। সামান্য সংস্কারে এটা বিলোপ হবে না। পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দূষিত জাতি/ফ্যাসিবাদী জাতি তৈরি করতে চেয়েছে। সেটা এ শিশুরাই ভেঙে দিয়েছে।
মাহফুজ আলম বলেন, তরুণদের শেখ হাসিনা আদর্শিক পাঠশালায় ভর্তি করতে চেয়েছিল। পাঠশালায় ভর্তি করে তাদের মাথা ব্রেইন ওয়াশ করে শেখ মুজিবের বন্দনা, শেখ হাসিনার বন্দনার মধ্যে দিয়ে কয়েকটা প্রজন্মকে তৈরি করতে চেয়েছিল। ওদের পরিকল্পনা ছিল মূলত কয়েকটি প্রজন্মকে মুজিববাদী চেতনার গুলি খাইয়ে তাদের নৈতিকভাবে, মানসিকভাবে ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া। এভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা স্থায়ী করা। কিন্তু যাদের তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল, সেই প্রজন্ম তাদের আয়নাঘর ভেঙে দিয়েছে। এ প্রজন্ম তাদের সে দম্ভ, এক পরিবার এক দলকেন্দ্রিক বাংলাদেশ সে প্রকল্প ভেঙে দিয়েছে।
মানুষের যে চাওয়া ছিল দেশ সংস্কারের, আমরা তা আজও বাস্তবায়ন করতে পারেননি বলে মনে করেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকারের জায়গা থেকে আমরা বিচার নিশ্চিতের চেষ্টা করছি।
এই জাতিকে উদ্ধারের প্রকল্প অনেক বড় উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, শুধু নির্বাচন আর সংস্কার দিয়ে কাজ শেষ হবে না। সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে নতুন রাষ্ট্র গঠনের।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শহীদদের স্পিরিট নিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার ও সংস্কারে দরকার আমূল পরিবর্তন, সেটা অল্প দিনে সম্ভব না। আবু সাঈদের ত্যাগ, স্পিরিট ধারণ করতে হবে। আমরা বিস্মৃতপরায়ণ জাতি, সহজেই ভুলে যাই। চাই না মানুষ বিজনেস ইউজুয়ালে ঢুকে পড়ুক। চাই এ ক্ষোভ জারি থাকুক। এ ক্ষোভ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এক দল, এক দেশ ও এক নেতা, শেখ হাসিনা এ নীতিতে দেশ চালিয়েছেন। প্রশাসনকে নিজের দলের অধীন করেছেন। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে আদর্শিক গুন্ডা লালন-পালন করেছেন। আদর্শিক গুন্ডারা বাংলাদেশের হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও নির্যাতন করেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণ সমাজ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে দিয়েছে। এটি একটি বৈশ্বিক ঘটনা।
তারুণ্যের উৎসব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম উদ্দীপ্ত হবে।
তরুণদের উদ্দেশে মাহফুজ বলেন, তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ, রাগ ও শোককে ইতিবাচক শক্তিতে পরিণত করতে হবে। তরুণদের ইতিবাচক শক্তিকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কাজে লাগাতে হবে।