মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

এখন আমাদের পরিবারটা কি এভাবে ভেসে যাবে?

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
এখন আমাদের পরিবারটা কি এভাবে ভেসে যাবে?
সাদেক বাচ্চুর পরিবার

কান্নায় ভেঙে পড়লেন সদ্যপ্রয়াত অভিনেতা সাদেক বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমরা একেবারে ‘সর্বস্বান্ত’ হয়ে গেছি ভাই, আমার ছোট ছোট ছোট বাচ্চা, সব উনি সামলে রেখেছিলেন। হুট করে এভাবে চলে যাবেন, আমরা ভাবতেও পারছি না। কী করব না করব; কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।

অভিনেতা সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়েছেন স্ত্রী শাহনাজ। সাদেক বাচ্চু নিজের ভাই-বোনদের মানুষ করতে গিয়ে মাত্র ১৫ বছর ৭ মাস বয়সে চাকরি নেন। বিয়ে করেন একেবারে ৪০ বছর পেরিয়ে গেলে। স্বামীর মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী শাহনাজ।

২০১৩ সালে সাদেক বাচ্চুকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় ইউনাইটেড হাসপাতলে খরচ হয়েছিল ৩০ লাখ টাকা। যা সাদেক বাচ্চুর অবসরের প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা হয়। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা। তার পরেও ফেরানো যায়নি সাদেক বাচ্চুকে। তিন অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলে-মেয়েকে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।

 

মঙ্গলবার বিকেলে আলাপকালে দীর্ঘ সময় তিনি কান্নার কারণে কথা বলতে পারছিলেন না শাহনাজ। তিনি বলেন, আমি কখনোই ভাবিনি উনি এভাবে চলে যাবেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এই অসময়ে চলে গেলেন, এখন আমরা জানি না আমাদের কী হবে। আমার বড় মেয়েটা মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল দিয়েছে, ছোট মেয়েটা দশম শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র ছোট ছেলে, সে তো অনেক ছোট, মাত্র সিক্সে পড়ে। আমরা এখন কিভাবে চলব, আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।

 

শাহনাজ বলেন, ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছুটা টাকা সঞ্চিত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র সাত বছর আগে ২০১৩ সালে ব্রেনস্ট্রোক করে, লাইফ সাপোর্টে চলে গিয়ে ছিলেন ৯ দিন। সে সময় ৩০ লাখ টাকা বিল দিয়ে আমার স্বামীকে সুস্থ করে নিয়ে এসেছিলাম। রিটায়ার্ড করার পর পাওয়া পেনশনের সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। আমাদের সংসার চলছিল ওনার পেনশনের টাকায়। অভিনয়ের পারিশ্রমিক কিছুটা সহায়তা করেছে। এখন আমি বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব?

 

শাহনাজ বলেন, এদেরকে মানুষ করতে হবে, সংসার চালাতে হবে। যেখানে ওনার চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল, সেখানে সামনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে ভয় পাচ্ছি। ভিন্ন কোনো আয়ের উপায় নেই। উনি খুবই আত্মসম্মান নিয়ে চলতেন, পারলে সহযোগিতা করতেন, কখনো অর্থনৈতিক সহায়তা আমাদের প্রয়োজন হয়নি, সর্বশেষ ওনার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধারদেনা হয়েছে, আমার ভাই পাশে দাঁড়িয়েছে, সহযোগিতা করেছে।

আরও পড়ুন : চলচ্চিত্র অভিনেতা সাদেক বাচ্চু আর নেই

 

শাহনাজ বলেন, আমার শ্বশুর শাশুড়ি বেঁচে নেই, আমার বাবাও মারা গেছেন। বয়স হয়েছে আমার মায়ের। আমাদের একমাত্র থাকার জায়গা ছাড়া কোনো জায়গাই নেই। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে যে সহায়তার আশা করব, এখন তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কমে গেছে। সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এই সময়টায় সহায়তা আশা করতে পারি না। তবে আমার এই দুঃসময়ে জায়েদ ছেলেটা আমার পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে গেছে। করোনার কারণে আসলে পাশে কাউকে পাইনি; কিন্তু সে আমার পাশে থেকে জানাজা, দাফন- সব কাজে সহায়তা করেছে।

মাত্র একটা দিন হলো স্বামী মারা গেছে, এই সময়টাতেও মাথা ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে না শাহনাজের। সন্তানদের দিকেও তাকাতে পারছেন না। তার পরও মনে করেন, সর্বস্বান্ত পরিবারটার পাশে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়াতে পারেন। তিনি বলেন, আসলে শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া তো আর কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না এখন। শুনেছি উনি দুস্থ শিল্পীদের সহায়তা করেন। আমার স্বামীর সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারটা কি এভাবে ভেসে যাবে?

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক বাচ্চু। এর আগে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: