নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। মানুষকে অরক্ষিত রেখে কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের আগস্টেও তারা তাদের নেতাকর্মীদের রেখে হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রমনাস্থ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) এ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতো না। আওয়ামী লীগকে আর কোনো গণতান্ত্রিক সুবিধা দেয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই দেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষকে। কিন্তু পাকিস্থান এখনো ক্ষমা চায়নি। এ কথা বলছি এ কারণে, একটি গোষ্ঠী এই বিষয়ে আমলে নিচ্ছে না, তারা বলেছ, ৭১ কোন ঘটনা না। তারা বরং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে। তাদের নাম বলতে চাই না। এখন তারা আবার গলা ফুলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। ইতিহাস তো ইতিহাস। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাই এদের চরিত্র। ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে উঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবার তাই করেছে, জনতার ক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাত্তরে হত্যাযজ্ঞে সহযোগীরা এখন গলা ফুলিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া সেসময় মানুষকে অরক্ষিত রেখে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গিয়েছিলেন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তান গণহত্যার জন্য এখন পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এ ছাড়া যারা হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছেন, তারা এখন গলা ফুলিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু ইতিহাসকে কেউ বিকৃত করতে পারবে না।
সংস্কার কোনো নতুন জিনিস নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের পাহাড় নিয়ে এসেছে। এর অনেক কিছুই জনগণ বোঝে না। বিএনপি এর প্রত্যেকটা নিয়ে মতামত দিয়েছে দেশের মানুষের কাছে। প্রথম সংস্কার নিয়ে এসেছেন জিয়াউর রহমান। এরপরে মৌলিক সংস্কার করেছেন খালেদা জিয়া। এবারও রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্রে প্রবেশ করতে নির্বাচন লাগবে। নির্বাচন পিছিয়ে দিতে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুতুব তৈরি হয়েছে, তারা বাংলাদেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিতে চায়। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।’
বাংলাদেশের মহিয়সী নারী বেগম খালেদা প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় ৯ মাস জেলে ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপির হাতে দিয়েই। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি, ১৬ সালে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিশন দিয়েছে। সংস্কার কোন নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে – বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। এটি আজ ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। যেটা আমরা মেনে নেব না। কারণ সেনাবাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের ভিত্তি তো বিএনপি করেছে। হঠাৎ করেই একটা বিপ্লব হয়নি, বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে উঠে এসেছে।
২০২২ সালে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৩১ দফা সংস্কার আমার দল দিয়েছে, আমার নেতা তারেক রহমান দিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন। যার মাধ্যমে তিনি দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছেন। রেইবো স্টেটের কথা বলেছেন, অর্থ্যাৎ দল-মত নির্বিশেষে যেখানে একটা জাতিতে পরিণত হবে। বিচার বিভাগের ন্যায় বিচার নিয়ে বলা হয়েছে। গণমাধ্যম সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং সংস্কার কোন নতুন জিনিস নয়।
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের বিশাল পাহাড় জমিয়ে ফেলছেন মন্তব্য করে বিএনপির এই দায়িত্বশীল নেতা বলেন, অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা, যা আমাদের জনগণ বুঝেও না। আমরা সে জন্যেই আমাদের দল থেকে তাদের সংস্কার প্রস্তাবনার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। কোনটায় একমত, একমত নই সেটাও আমরা জানিয়েছি। আমরা জোর দিয়ে বলেছি, নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রে যেতে হবে। সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র ছাড়া আমরা জানি না যে আর কোন সিস্টেম আছে যেটা জনগণের কল্যাণ করতে পারে।
আজকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যেন নির্বাচন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়। বিলম্বিত হয়। দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় সে কাজটা আজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।