মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পশুর হাটগুলো করোনা যেন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দিন দিন করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে আর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। হাটগুলোতে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, সামাজিক দূরত্ব না মেনেই চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয়।
এদিকে লাম্পি স্কিন নামক গবাদি পশুর নতুন একটি ভাইরাস মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়। এর পরেও হাটগুলোতে পশুগুলোর কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই চলছে ক্রয়-বিক্রয়। বাজারগুলোতে নেই কোনো পশু রোগ নির্ণয় করার ব্যবস্থা, নেই কোনো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পশুর ডাক্তার বা পর্যবেক্ষণ টিম। শুক্রবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট আদমপুর বাজারে।
কমলগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫১ জন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। অন্যদিকে উপজেলায় লাম্পি স্কিন ভাইরাসে সহস্রাধিক গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০টি গরুর। তবে এখন এ রোগের প্রকোপ নেই বলে দাবি করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
গরু ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গরুগুলোকে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে প্রবেশ করানো হচ্ছে। মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু তা-ও নানা অজুহাত দেখিয়ে মানছেন না কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা কিছুটা কম হওয়ায় ও গরুর লাম্পি স্কিন ভাইরাসের কারণে গরুর দাম অনেক কমে গেছে।
হাট ইজারাদার কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই পশু ক্রয়-বিক্রয় করার কথা স্বীকার করে বলছেন, তারা জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটরাও হাট-বাজারগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেককে জরিমানাও করছেন। কিন্তু তার পরেও জনগণ তা মানছে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেদায়েত আলী বলেন, কোরবানির গরুর হাটগুলোতে তাদের মেডিক্যাল টিম কাজ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়ে যাতে উপকৃত হয়, তার জন্য দু-এক দিনের মধ্যে মেডিক্যাল টিম পশুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক তদারকি করবে। তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগে কমলগঞ্জ উপজেলায় লাম্পি স্কিন ভাইরাসে গবাদি পশু আক্রান্ত হলেও এখন আর এ ভাইরাসটি নেই। গবাদি পশুগুলো সুস্থ আছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল হক বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একমাত্র ব্যক্তিসচেতনতাই পারে কমলগঞ্জের করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে।