টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি :
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) বলেন, এই সরকার যদি দুর্নীতির গলা টিপে না ধরতে পারে, তাহলে এই সরকারও মানুষের আস্থা হারাবে। ড. ইউনূসকে এরআগেই যদি দেশের কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে দেশ অনেক বেশি উপকৃত হতো। উনার নেতৃত্বেই দেশে এবার নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। আমি আশা করি এবার দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে টাঙ্গাইল শহরের নিজ বাসভবনে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের সবাই যদি মনে করেন ড. ইউনূস দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকবেন বা উনার ক্ষমতার লালসা আছে, আমি সেটি বিশ্বাস করি না। আমি জানি উনার ক্ষমতার কোনো লালসা নেই। এরপরও উনাকে এক অথবা দুই বছর সময় দিতে হবে দেশটাকে গুছিয়ে তুলতে।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতার লোভ নেই। তাকে একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হবে। তবে, সেটি দুই বছরের বেশি নয়। ইউনূসের ওপর জুলুম করা হয়েছে। ইউনূসকে যদি আমরা দেশের পক্ষে ও কাজে খাটাতে পারতাম তাহলে বাংলাদেশ আরও বেশি লাভবান হতো। আশা করছি তিনি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন।
পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত থানা থেকে পুলিশ পালানোর ঘটনা নেই। পুলিশ সদস্যদের বলব, আপনারা থানায় ফিরে যান এবং আইনের নির্দেশ মেনে চলুন। আপনারা আবারও যদি দলবাজি করেন তাহলে আপনাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
তিনি বলেন, যারা ধানমন্ডি ৩২ পুড়িয়েছে তাদের বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে তদন্ত করে এর বিচার করতে হবে। সঠিক বিচার না করলে এই সরকারকেও তার জবাবদিহিতা করতে হবে।
বঙ্গবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু এই দেশের সম্পদ, এই দেশের সম্মান। তার প্রতিকৃতি ভাঙার কোনও মানে হয় না। এটা যদি আন্দোলনের পক্ষের লোকেরা দেখে থাকেন তাহলে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। আর যদি কেউ এর ভেতরে ঢুকে আন্দোলনকে বিপদগামী করার জন্যও করে থাকে তাহলে বর্তমান সরকারকে এদের খুঁজে বের করে এর বিচার করতে হবে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু এক নয়। আমি আশা করব, এই সরকার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার করবে। এর বিচার না হলে এই সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু এই দেশের সম্মান। তার ভাস্কর্য এভাবে ভাঙা উচিত হয়নি।
সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত করে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সংকটময় এই মুহূর্তে যদি আপনাকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় কী করবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করিনি, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগ এক নয়। আমি আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভাবি না। বঙ্গবন্ধু, দেশ আর মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ভাবি।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ সময় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। আট বছর আগেইতো তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি ৬৫-৬৬ সাল থেকে আন্দোলনে জড়িত, এরকম বিপর্যয়, ধ্বংস আর জীবনহানী এত অল্প সময়ে দেখিনি। এই দেশটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও ১৪ দলের না, দেশটা ১৮ কোটি মানুষের।
পুলিশকে থানায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আইনের নির্দেশ মেনে চলবেন, কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠির নির্দেশ নয়। সারা দেশ আপনাদের পাশে থাকবে।
এ সময় কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।