দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ইউএনওর বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এই হামলায় অংশ নেয় দুজন। এদের মধ্যে একজন ছিল মুখোশ ও অন্যজন পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরা। যাতে তাদের চেনা না যায়। রাতে তারা এক এক করে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ঘটনার পর একই সঙ্গে বের হয়ে যায়।
ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ক্যাম্পাস ও ঘোড়াঘাট থানার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ কারণে দুস্কৃতকারীরা নির্বিঘ্নে নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার অভিযানে অংশ নেয় দু’জন। তবে এরা কারা এবং কি উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে, এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এমন কথা নিশ্চিত করেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া ও পুলিশের রংপুর জোনের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এর আগেও একই কথা জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা। সেই সিসি ফুটেজ ধরেই এগোচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আরও পড়ুন : অস্ত্রোপচার সম্পন্ন : এখনও শঙ্কামুক্ত নন ইউএনও ওয়াহিদা
অন্যান্য উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ক্যাম্পাস ও থানা প্রায় কাছাকাছি অবস্থান হলেও ঘোড়াঘাট উপজেলার চিত্র ভিন্ন। ঘোড়াঘাট উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ক্যাম্পাস ওসমানপুরে। আর ঘোড়াঘাট থানা সেখান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে।
ওসমানপুরে উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ইউএনওর বাড়ির পেছনটা শুনশান নীরবতা। নেই তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়িতে ছিল শুধুমাত্র একজন নৈশ্যপ্রহরী। এই অবস্থায় থানা ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান হওয়ায় নিরাপদ ভেবেই দুস্কৃতকারীরা নির্বিঘ্নে এই ঘটনা ঘটাতে পেরেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে উপজেলা ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী বাসিন্দা ঘোড়াঘাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভুট্টু বলেন, উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাস ও থানার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এ কারণেই উপজেলা পরিষদ ওসমানপুরে প্রায়ই চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘটায় দুস্কৃতকারীরা।
ওসমানপুরে উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের অদূরে গত ১৫ দিনে আগে তার বাড়িতেও চুরি সংঘটিত হয় এবং প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়।
অন্যদিকে একজন নির্ভীক ইউএনওকে প্রাণনাশের চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ঘোড়াঘাট উপজেলার সাধারণ মানুষ। ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান রুশিনা সরেন জানান, তিনি একজন খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি (ইউএনও) অন্যায়কে কখনই প্রশ্রয় দিতেন না। তার মতো একজন ভালো মানুষের ওপর এই হামলা ও প্রাণনাশের চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর নানান অভিযানে অংশ নেন ওয়াহিদা খানম। বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ কারখানা বন্ধসহ বিভিন্ন অপকর্ম বন্ধ করেন তিনি। তিনি কখনই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি।
তবে কি কারণে এই হামলা, সিসি ফুটেজের দুজন এবং আর কে কে এর পেছনে থাকতে পারে তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।