সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগ হিন্দু সেজে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, প্রত্যেক হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান আমাদের আমানত। কেউ তাদের নির্যাতন করতে পারবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ চাইছে একটা ঝামেলা করতে, হিন্দুদের নাম করে ছাত্রলীগ হামলা করছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, কোনো ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেওয়া যাবে না।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা থানা বিএনপি এবং সব সহযোগী অঙ্গসংগঠন কর্তৃক আয়োজিত নিমগাছি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজকে আমার এখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল না। আজ থেকে দুই বছর আগে যখন আমি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাচ্ছি তখন শুনলাম খুনি হাসিনার আদালত আমাকে ৯ বছরের সাজা দিয়েছে। আমি তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তার রায় আমি মানি না। হাসিনার জেলে আমি যাব না। তাই জেলে যাওয়ার চেয়ে আমি বিদেশে থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবো। আন্দোলন পরিচালনা করব, আমি তাই করেছি।
তিনি বলেন, আজ হাসিনা আবারও বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তাহলে কী করতে হবে, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যুদ্ধ কিন্তু শেষ হায়নি। আমরা কিন্তু ক্ষমতায় আসি নাই, ক্ষমতায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাই বিএনপির ক্ষমতায় আসার একমাত্র পথ হলো জনগণের ভোট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশের মানুষ হাসিনার কয়েদি হয়ে গিয়েছিল। ১৬ বছর লড়াই করার পরে আজ আমরা একটা মুক্ত আকাশ দেখতে পাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে চাই, আওয়ামী লীগ যতোই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তারা আর দেশের ক্ষতি করতে পারবে না।
টুকু বলেন, আজ হাসিনার পতন হয়েছে, তিনি তার প্লেটের ভাতও খেতে পারেন নাই। তিনি যে মুরগির রান খেতে চেয়েছিলেন, সেই মুরগির রান খেয়েছে জনগণ। হাসিনার অহংকার এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল যে তিনি ভাবতেন আল্লাহর পরেই তিনি।
তিনি বলেন, তারা খালেদা জিয়াকে টুপ করে নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন। আজকে আপনি কোথায়। যাদেরকে দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন আজ তাদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ যদি সাঈদ-মুগ্ধদের, অন্যান্য শহীদদের রক্তে রাজপথ লাল না হতো তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতো না। আজ ১২ বছর পরে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে গিয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী তাকে প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্মান দিয়েছে স্যালুটের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, আমি ১৬ বছর আগে যে কর্মী দেখতাম এখন আরও নতুন নতুন কচি কচি মুখ দেখি। আমি ভেবেছিলাম আমাদের মনে হয় নতুন কর্মী নাই, কিন্তু অসংখ্য নতুন মুখ আমাদের কর্মী। এরাই একসময় দেশের হাল ধরবে। আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করবে। আজ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, এ জন্য তাকে পালিয়ে গিয়ে অন্যের ভাত খেতে হচ্ছে। আর আমাদের নেত্রী ঠিকই দেশে নিশ্বাস নিচ্ছেন।
টুকু বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে ওয়াদা করেছে, আমরা জনগণকে নিয়ে ক্ষমতায় আসবো। তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বলেছে, এই দেশকে সংস্কার করতে হবে। আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশটা শেষ করে দিয়েছে তাই সংস্কার করা খুব দরকার। এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি, আর সেই ৩১ দফার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের তারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আপনারা শুনুন, একসময় জিয়াউর রহমান যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই তারেক রহমানও দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। একসময় তিনিই হবেন বাংলাদেশের পথ প্রদর্শক।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাসুলও একসময় অনুসারীদের বলেছিলেন, তোমরা বেশি আনন্দিত হইয়ো না, তারা আবারও হামলা করতে পারে। তাই আপনাদের বলছি, সাবধান, আওয়ামী লীগ হলো সাপ। তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে, তাদের সঙ্গে চলাফেরা চলবে না। তাদের সব হারাম, তাই তদের হারাম কেউ খাবেন না।
রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দুলাল হোসেন খান, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল রহমান টুটুল ও সলঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আলীম সরকারের পরিচালনায় ও রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শামছুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন অর রশীদ খান হাসান, সলঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান সরকার, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি স.ম আফসার আলী, রায়গঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি হাতেম আলী সুজন, তাড়াশ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তপন কুমার গোস্বামী।
জনসভায় জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।