নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কসাই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস উইং আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়ে-ছাত্র-শ্রমিক ও রিকশাচালকদের নির্দয়ভাবে খুন করার অন্যতম বুচার হচ্ছেন তিনি। তাকে যারা প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে, তার নিউজ যারা করছে তাদের মানটা আপনারা বুঝেন। এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল বড় রকমের প্রোপাগান্ড ক্যাম্পেইন। পৃথিবীর কেউ কোনো বুচারকে তার প্ল্যাটফর্ম, ইন্টারভিউ দেয় না। আসাদুজ্জামান কামাল ইজ দা বুচার অব বাংলাদেশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে আসাদুজ্জামান কামালের সাক্ষাৎকার প্রচার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
এ ব্যাপারে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি এটি আইনের ব্যত্যয় হয় তাহলে আইনগতভাবে এটা দেখা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশে আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ করেছেন। তবে এ অবস্থায়ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য আমেরিকা বন্ধ করছে না। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার এ বছরই বড় আকারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে। এতে ১৭০টি দেশ অংশ নেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত সম্মেলনের সহ আয়োজক জাতিসংঘ।
তিনি বলেন, রাখাইন প্রদেশে একটা বড় রকমের মানবিক বিপর্যয় হয়েছে। বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে একটা সিভিল ওয়ার চলছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার আর্মির একটা বড় ধরনের ক্লেশ হচ্ছে। সেটার কারণে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা এসেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভা প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা ঐতিহাসিক সফর ছিল। সভায় কমপক্ষে ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্প নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, গার্মেন্টসের এক্সপোর্ট কি কমেছে? আজকেও একটা পত্রিকায় দেখলাম যে ৫১টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হবে, খুলবে, একটা ন্যাচারাল প্রসেস। সরকার দেখে যে বাংলাদেশের এক্সপোর্ট বাড়ছে কি না। বাংলাদেশের এক্সপোর্ট সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ১৬/১৮ শতাংশ, নভেম্বরে প্রায় ২২ শতাংশ। ডিসেম্বরে ১৮ শতাংশের মতো। আমাদের গ্রোথ এরকম।
তিনি বলেন, যেসব ফ্যাক্টরির মালিক পালিয়ে গেছে, তাদের পুরো বার্ডেনটা আমাদের ওপর দিয়ে গেছেন। ব্যাংকগুলো থেকে চুরি করে যা যা ছিল সব নিয়ে পালিয়ে গেছে। শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে তারা মজা দেখছেন। এক্সপোর্ট বাড়া মানে জব তৈরি হওয়া। ওভার অল এক্সপোর্ট আমাদের বাড়ছে। আমরা এক্সপোর্টের ফিগারের ব্যাপারে কোনো ম্যানিপুলেটিং করছি না। শেখ হাসিনার আমলে ম্যানিপুলেশন হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা খুবই স্লো প্রসেস। এটার জন্য যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে টাস্কফোর্স, অ্যাসেট রিকভারি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ১১টা টিম কাজ করছি। সারা বিশ্বের টপ টপ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলছি। পাচার করা টাকা ফেরত আনা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শফিকুল আলম বলেন, যে টাকা পাচার হয়েছে সেটা বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকা। তাদের টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে শেখ হাসিনার চোরত্রন্ত্রের লোকজন। সে টাকাটা আমরা যেভাবে হোক ফিরিয়ে আনব। সেটার জন্য আমরা গ্লোবালি একটা সমর্থক চাচ্ছিলাম। সেটাতে সবাই অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। প্রফেসর ইউনুস যখনই বিশ্বের টপ লিডারদের সঙ্গে কথা বলছেন তখন তিনি এ বিষয়টা তুলছেন।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।