নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বিভিন্ন রকম মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল। জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে নির্মম আয়নাঘর। দীর্ঘ ১৭ বছরে বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশে সকল দলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াতের আয়োজনে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা অন্যায় করেছে বলেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুন্দর একটি দেশ গড়তে হবে। এই বাংলাদেশ সবার। বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধি ও ঐক্য ধরে রাখতে সবসময় জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে। আমাদের মূল লক্ষ্যই মানুষের সেবা করা ও সাধারণ মানুষের পাশে থাকা।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশে। কিন্তু যেনতেন মার্কা নির্বাচন এ জাতি চায় না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চায়, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যে নির্বাচনে পেশিশক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না, এমন একটি নির্বাচন আমরা চাই।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, সত্যিকার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। যারা ভুয়া ভোটার, তাদেরকে বাদ দিতে হবে। যেসব যুবকরা ভোটার হয়েছে কিন্তু নাম তালিকাভুক্ত হয় নাই, তাদেরকে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
জুলাই আন্দোলন করতে গিয়ে বিদেশেও অনেকে জেলে গিয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, তারা একই সাথে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। রেমিটেন্স বন্ধ করে স্বৈরাচারী সরকারকে লাল ফ্লাগ দেখিয়েছে, আমরা তাদেরকে স্যালুট জানাই। প্রত্যেকটি প্রবাসী ভাই ও বোনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, যারা মাঠ প্রশাসনে আছেন, যারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেন নাই, দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, যাদের হাত থেকে জনগণের টাকায় কেনা বুলেট এসে জনগণের বুকে লেগেছে, তাদেরকে আগামী নির্বাচনে কোনো দায়িত্বে দেখতে চাই না। কিন্তু প্রশাসনের সৎ এবং দেশপ্রেমিক অফিসার যারা আছেন, তাদেরকে আমরা কথা দিচ্ছি, তোমাদের দায়িত্ব পালনে তোমাদের হাতে হাত রেখে দেশবাসী কাজ করবে।
জামায়াতের আমীর বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব কটি কার্যালয় কার্যত সীলগালা করে রাখা হয়েছিল। একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা নিবন্ধনটা এখনও ফিরে পাইনি। নিবন্ধনের জন্য এখনো আদালতে লড়াই করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। অন্যায়ের কাছে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত না করার কারণে কেড়ে নেওয়া নিবন্ধনটা ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি অবিলম্বে প্রতিকসহ নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে।
এ ছাড়া দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশে বিদেশে যেখানেই থাকুক জাল ফেলে ফিরিয়ে এনে সরকারি কোষাগারে জমা করার দাবি করেন জামায়াতের আমীর।
গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার এবং বৈষম্যহীন-ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন নরসিংদী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মোছলেহ উদ্দিন।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার, আব্দুল মান্নান, মজলিসে সূরা সদস্য এডভোকেট মশিউল আলম, মাওলানা মমিনুল হক, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার, মুন্সীগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর আ.জ.ম রহুল কুদ্দুস, নরসিংদী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মকবুল হোসেন প্রমুখ।