রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগ আমাদেরকে কথা দেওয়ার পরও কথা রাখেনি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর সেনপাড়ায় স্কাইভিউ বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হয়েছে, এর জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন সার্বিকভাবে ভালো হয়নি। যে রকম আশঙ্কা করেছিলাম সেটাই হয়েছে। সরকার যেখানে নিরপেক্ষ করতে চেয়েছে সেখানে নিরপেক্ষ হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে সেটাই করেছে। যেটা নিয়ে আমরা সব সময় আতঙ্কিত ছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাদেরকে কথা দেওয়ার পরও কথা রাখেনি। যার জন্য এই নির্বাচনগুলোর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না এবং কেউই আসতে চাচ্ছে না।
জিএম কাদের বলেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমার বিশ্বাস এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। একটি পক্ষ আমাদের রাজনীতিটা নষ্টের চেষ্টা করছে। এখানে সরকারও মদদ দিচ্ছে বলে আমার ধারণা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান যেখানে ছিল সেখানেই আছে।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করবে কি না, এ প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করছি না। ফলাফল প্রত্যাখান করার মতো কোনো কারণ আমাদের সামনে নেই। তাহলে কীভাবে প্রত্যাখান করবো? তারপরও দলের এমপিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা সংসদে যাব না এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। তারপরও জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছে, এটি সিদ্ধান্তহীনতা কি না, এর জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এটি সিদ্ধান্তহীনতা নয়, বরং এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের মতামতে আমাকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দলের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। নির্বাচন বর্জন করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। দলকে রক্ষা করাসহ এই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে দলের ভালোর জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, রংপুরের সব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ ছিল। আমাদের অনেকে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছে। কিন্তু তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফল বা সত্যিকারের ফলাফলের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়নি। লোকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। যারা ভোট দিতে এসেছেন তাদেরকে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তীকালে যেসব জায়গায় ভোট ১০ থেকে ২০ শতাংশ পড়েছে, বাকি জায়গায় ব্যালট পেপারে সিল মেরে নেওয়া হয়েছে। এটা তো পরিষ্কার ব্যাপার। এতে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা কমে গেছে এ ধরনের কথা রটনা করা হয়। সরকার থেকে রটনা করে, কিছু সরকার সমর্থিত মিডিয়া এটাকে বিরাটভাবে প্রচার করে আমাদেরকে নিচে নামানোর জন্য।
পূর্ব থেকে আশঙ্কা ও সরকারের ফল নির্ধারণী নির্বাচনে কেন অংশ নিলেন এবং এই নির্বাচন কেন মেনে নেবেন এমন প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, আমরা যেসব জায়গায় জয়ী হয়েছি যেসব জায়গায় সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে। যেমন রংপুরে কোনো অনিয়ম হয়নি। কাজেই সরকার যেখানে সুষ্ঠু চেয়েছে সেখানে হয়েছে, যেখানে চায়নি সেখানেই হয়নি।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল আমরা যে নির্বাচনী ফলাফল দেখেছি তাতে আমরা আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। আমাদের কোনো আসন ছাড় দেওয়া হয়নি। আমি বারংবার বলছি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের কোনো জোট হয়নি, কোনো আসন ভাগাভাগিও হয়নি। এমনকি কোনো আসনে ছাড়ও দেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, আমাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং অর্থের প্রভাবমুক্ত পরিবেশ থাকবে। আওয়ামী লীগ আমাদেরকে সেটা কথা দিয়েছিল, নিশ্চিতও করেছিল। তার প্রেক্ষিতেই তারা ২৬টি আসনে তাদের নৌকার মার্কার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছিল। এসব আসনে শক্ত স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাদের দলীয় লোকের ওইসব প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করেছে। তখন আমি বলেছি এটা কোনো আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতা নয়। এখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ নৌকা না থাকা আসনেও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
জিএম কাদের বলেন, ভোটের আগের দিন রাত থেকে আমাদের প্রার্থীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। নির্বাচনের দিন সকাল থেকে আমাদের প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্র দখল করেছে। আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে তাদের এজেন্টদের দিয়ে সিল মেরেছে। সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার আমাদের প্রার্থীদের কোনো সহযোগিতা করেনি। বরং প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করেছে, যেটা আমরা সব সময় আশঙ্কা করেছিলাম। এটার বিপক্ষেই আমাদের আশঙ্কা ছিল। আওয়ামী লীগ আমাদেরকে কথা দেওয়ার পরও কথা রাখেনি।
জিএম কাদের আরও বলেন, এ নির্বাচনে ঢাকা-১ সালমা ইসলাম, কুমিল্লা-১ আমির হোসেন ভূঁইয়া, জামালপুর-৩ মীর সামসুল আলম, নরসিংদি-২ রফিকুল ইসলাম সেলিম, কক্সবাজার-৪ নুরুল আলম ভুট্টো, শেরপুর-১ মাহমুদুল হক মনি, লালমনিরহাট-৩ জাহিদ হাসান, সিলেট-২ ইয়াহিয়া চৌধুরী, গাইবান্ধা-৩ মাইনুল রাব্বী চৌধুরী, নারায়নগঞ্জ-১ সাইফুল ইসলাম, নারায়নগঞ্জ-২ আলমগীর শিকার লোটন, চাঁদপুর-৪ সাজ্জাদ হোসেন, কুড়িগ্রাম-৪ একেএম সাইফুর রহমান, বাগেরহাট-৪ সাধন কুমার মিস্ত্রি, জয়পুরহাট-১ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, নীলফামারী-১ তসলিশ উদ্দিন, রংপুর-৬ নুর আলম, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলসহ অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচিত হয়েছে। অথচ এসব আসনে আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। এখন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঘেরাও করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যা দূর্ভাগ্যজনক। দেশের রাজনীতিতে নতুন ধরনের ডায়মেনশন দেখা গেল। যা ভবিষ্যতে সরকারকে এটির জন্য মাশুল দিতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ভুল কি শুদ্ধ এখন এটা মূল্যায়ন করা যাবে না। সামনের দিনগুলো দেখতে হবে তারপর আমরা ঠিকভাবে বুঝতে পারব।
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জেলা কমিটির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি আলাউদ্দিন মিয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।