নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে ৭৪-এ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন। সেসময় দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সাধারণ লড়াই নয়, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে বিএনপিকে। অস্ত্র-গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।
শনিবার (১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, লড়াই করেও সাফল্য আসছে না বিএনপির, এক দিনে সাফল্য আসে না। কেন বেগম জিয়াকে বের করতে পারিনি, সেটাও দেখতে হবে। লড়াই চলছে, লড়াই চলবে দাবি আদায়ের আগে পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বলতে পারেন ১৫ বছর ধরে বিএনপি লড়াই করছে, কিন্তু সাফল্য ঘরে তুলতে পারেনি। তবে বিএনপি হারেনি। যতদিন সফলতা না আসবে ততদিন লড়াই চলবে। আন্দোলন এক দিনে সফল হয় না, ধৈর্য ধরতে হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার হটানোর সংগ্রাম চলছে। সমস্যা সবখানেই আছে, সমস্যা ছাড়া কোনো কাজ হয় না, সফলতাও আসে না। লড়তে গিয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন, ত্যাগ করতে হচ্ছে, কিন্তু বিএনপি পিছপা হয়নি। লড়াই করতে গিয়ে কৌশল কখনও কখনও পরিবর্তন করতে হয়। আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো হয়ে থাকে। সাফল্য যখন আসে সবাই দাবি করে, আর যখন পরাজয় হয় তখন কেউ পাশে থাকে না।
তিনি বলেন, বিএনপি হারেনি, সাফল্য আদায়ে উজ্জীবিত হয়েছে বিএনপি। লড়াই করেই দাবি আদায় হবে। বেনজীর সব একাউন্ট খালি করে দুবাই চলে গেছেন। স্বপরিবারে তিনি কীভাবে গেলেন? সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশের পরও কীভাবে বিদেশে যেতে পারেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই-সংগ্রাম করছি। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজয় আমাদের অর্জন করতেই হবে, সাফল্য আমাদের আনতেই হবে। আজকে এই পেশাজীবীদের আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা একটা জিনিস পরিস্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশে বিএনপি কখনোই তার অভিষ্ট লক্ষ্য থেকে সরে দাঁড়াবে না। তার লক্ষ্য অটুট আছে। কৌশল অনেক সময় পরিবর্তন হতে পারে, সেটাই করি আলোচনা করে ঠিক করব। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের যে রাজনীতিটা জিয়াউর রহমান যে পতাকা তুলে ধরেছিলেন সেই পতাকা; বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির যে দর্শন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের যে দর্শন সেটা পরবর্তিকালে তুলে নিয়ে এগিয়ে গেছেন আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। এখনো কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে আমরা সেই পতাকাকে নিয়ে এগুচ্ছি। তারেক রহমান সেই বিশ্বাসেই এগিয়ে চলেছেন, দিনরাত পরিশ্রম করছেন, আমাদের সবাইকে সংগঠিত করবার চেষ্টা করছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, সাকসেস হ্যাজ অনলি ফেভারস যখন সাফল্য আসে তখন সবাই দাবি করে যে আমার জন্য হয়েছে, আমার জন্য হয়েছে ফেইলিউর হ্যাজ নান। আমরা মনে করি, আমরা ব্যর্থ নই। আমরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছি, আমরা নতুন করে আবার কাজ শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ জয় আমাদের হবেই। কারণ আমরা সত্যের পথে ন্যায়ের পথে লড়াই করছি।
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সস্পত্তি-ক্রোক নিয়ে সরকারের দেয়া বক্তব্য ‘লোক দেখানো’ বলে দাবি কওে তিনি বলেন, ‘পত্রিকা দেখলাম, বেনজীর চলে গেছে হি লেফট দ্যা কান্ট্রি। মে মাসের ৪ তারিখে স্বপরিবারে চলে গেছে। যাওয়ার আগে তার একাউন্টগুলো সমস্ত সে খালি করে গেছে, ফিক্স একাউন্টগুলো সেখানে ৬০ কোটি টাকার মতো যেটা পত্রিকায় এসেছে হয়ত আরো বেশিও হতে পারে।’
‘আমার প্রশ্ন সে কিভাবে গেলো? এই যে তারা (সরকার) বললো যে, তার সম্পত্তি আমরা ক্রোক করছি.. আদালত থেকে বলালো, দুদক থেকে মামলা করেছে, তাকে কোথাও যেতে দেয়া হবে নাৃএসব বলা হলো। তাহলে ৪ তারিখ স্বপরিবারে পত্রিকা নামটাও দিয়েছে.. সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে করে কিভাবে চলে গেলো; সরকারের চোখের নাকের ওপর দিয়ে।’
ফখরুল বলেন, ‘তাহলে এই যে কথা বলছেন যে, কেউ ছাড় পাবে না, আমরা সবাইর বিচার করি। এটা কি আপনি বাংলাদেশের মানুষ সবাইকে আহাম্মক মনে করেছেন?’ বাংলাদেশের মানুষ তো আহাম্মক না। সবাই বুঝে, এগুলো সব আপনাদের লোক দেখানো, প্রতারণা এখন পর্যন্ত এই প্রতারণা করে আপনারা দেশ শাসন করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি সেদিনও বলেছি, শুধু বেনজীর নয়, এক আজিজ (আজিজ আহমেদ) নয়, অসংখ্য আজিজ আর বেনজীর তারা তৈরি করেছে। সব সময় মনে রাখতে হবে, এরা বাংলাদেশটাকে একটা লুটের সামাজ্যে পরিণত করেছে। লুটপাট বর্গীর দেশ পরিণত করেছে। এখান থেকে আমাদের দেশটাকে রক্ষা করতে হবে।’
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক আাফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অ্যাডভোকেট মাসুম আহমেদ তালুকদার, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডা. রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান শামীম, এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ফখরুল আলম, কাজী সাখাওয়াত হোসেন, জাহানারা সিদ্দিকী, বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, জিয়াউল হায়দার পলাশ, তানভীরুল আলম, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ পেশাজীবীরা বক্তব্য রাখেন।