মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, দাফন দিল্লিতে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, দাফন দিল্লিতে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, দাফন দিল্লিতে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার শহরের গোলচত্ত্বর মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে দাফন করে গেছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। দাফন হয়েছে দিল্লিতে। মুর্দা শেখ হাসিনা কাফন ফুড়ে মাঝেমধ্যে কথা বলে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা কখনও সফল হবে না।

তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশন রিপোর্টে হাসিনা গণহত্যাকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী হাসিনা বিশ্ব খুনি। হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ ও হাসিনার বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই।

সালাহউদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কথা দিয়েছেন ডিসেম্বরের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নিয়ত যদি সাফ থাকে, তাহলে অনতিবিলম্ব নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। মানুষ রক্ত দিয়েছে এ দেশে হারানো গণতন্ত্রকে পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য। তারা জীবন দিয়েছে একটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এ বছরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো তার আগেই সম্পন্ন করতে হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তবে সেটিকে অজুহাত বানিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন পেছানো চলবে না। এ বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। যারা আনুপাতিক ভোটের কথা বলছেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে সাবেক ওই মন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের আগেই দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। কিছু উপদেষ্টা জনগণের পালস বুঝে না। তাদের নসিহত করুন, অথবা বিদায় দিন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। গণঅভ্যুত্থানের স্পিড অনুযায়ী নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করুন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে নজর দিন। পতিত হাসিনার দোসরদের অস্থিরতার অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করুন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অনুপাত-অনুপাত নির্বাচন যারা চান, তাদের রাজনৈতিক অনুপাতের জ্ঞান নেই। স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসাবেন না। এদেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছে। বৈষম্যহীন জ্ঞানলদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ছাত্র-জনতা ম্যান্ডেট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এজন্য ভোটবিহীন এইদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুতরাং জাতীয় সংসদেই নির্ধারিত হবে গণতান্ত্রিক সংস্কারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র রক্ষার সব কর্ম।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্ত, অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের স্বপ্ন ধুলিস্যাত করে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান রাজনৈতিক মৃত্যুবরণ করেন। আর ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই নিজের কবর রচনা করেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে, আওয়ামী লীগের দাফনকার্য সম্পন্ন করে। এখন আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। মুর্দা হাসিনা কাফন পরে কথা বলছে দিল্লিতে বসে। পতিত ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা হাসিনা নতুন বাংলাদেশে কাফন পরে কথা বলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এদেশে মুর্দার কথা বলা জায়েজ নেই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী শব্দ। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা এদেশে রাজনীতি করেনি। করেছে-সংসদীয় একনায়ক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খুন, গুম,লুটপাট। যার কারণে শেখ হাসিনা এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত, বিশ্ব স্বীকৃত একজন খুনি।

বিএনপির ওই নীতি-নির্ধারণী বলেন, শহীদ জিয়া এদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছেন। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিতাড়নের মধ্য দিয়ে পুনঃ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্নার সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ, ব্যারিস্টার মীর হেলালসহ জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া