করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাজায় অংশ নেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
রোববার বাদ আসর মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাড়ি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ও শেষ নামাজে জানাজায় প্রেসিডেন্ট ছাড়াও প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. শামীমুজ্জামান, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ও পরিবারের সদস্যবর্গ অংশ নেন। জানাজা পরিচালনা করেন প্রেসিডেন্টের কনিষ্ঠ পুত্র ব্যরিস্টার রিয়াদ আহমেদ তুষার।
পরে কামালপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন, মা তমিজা খাতুন, বড় ভাই মো. আবদুল গণি এবং আরেক ছোট ভাই হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের কবরের পাশে প্রিয় ছোট ভাই আবদুল হাইকে সমাহিত করা হয়। এ সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি শেষ বিদায় জানান প্রিয় ও স্নেহের ছোট ভাইকে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকার সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের ছোট ভাই ও সহকারী একান্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাই।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাইয়ের লাশ মিঠামইনে আনা হয়।
উপজেলা হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামানোর পর নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই অবস্থিত মুক্তিযাদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার শোকাহত মানুষ।
মাঠের পশ্চিমপার্শ্বে সামিয়ানা টানানো মঞ্চে কফিন রাখার সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন ঢেকে দেয়া হয় লাল-সবুজের পতাকায়। গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এ সময় পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব-উল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পিপি শাহ আজিজুল হক, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ওমান খান প্রমুখ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সাামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বেলা পৌনে ৩টায় সেখানে অনুষ্ঠিত প্রথম নামাজে জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া কামনা করে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, প্রেসিডেন্টের ছোট বোন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের পুত্র ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহম্মেদ তরুণ ও প্রেসিডেন্টের ছোট ভাই প্রয়াত হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের পুত্র সদর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল।
এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি বলেন, আমার চাচা একজন সহজ-সরল ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। উনার মৃত্যু আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না। এসব কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত এমপি তৌফিক কেঁদে ফেলেন। তিনি চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন। নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন মাওলানা ইয়াকুব আলী বরুনী। প্রথম নামাজে জানাজা শেষে মরহুমের কফিনবন্দী লাশ কামালপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রথম নামাজে জানাজা শেষ হওয়ার পর বিকাল ৪টা ৫মিনিটের দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইনে আসেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। হেলিপ্যাডে প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদান করার পর তিনি মিঠামইন থানা পুলিশের একটি গাড়িতে করে কামালপুর গ্রামের বাড়িতে যান। প্রেসিডেন্টের সফরসূচি অনুযায়ী, সোমবার বিকাল ৫টায় প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।